মো. জোবাইদুল ইসলাম

  ১৩ মে, ২০২২

ইসলাম

জ্ঞান ও জ্ঞানীর মর্যাদা

ইলম আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো জানা, বোঝা, হৃদয়াঙ্গম করা, জ্ঞান। পরিভাষায় বিখ্যাত আরবি অভিধান ‘আল মুজামুল ওয়াসিত’ প্রণেতার মতে, ইলম বলা হয় কোনো কিছু সম্পর্কে যাবতীয় তত্ত্ব ও তথ্যানুসারে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা।

মহান আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-এর কাছে সর্বপ্রথম ওহি প্রেরণ করে বলেন, ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়। এই পড়ার দ্বারাই মানুষের জ্ঞান অর্জিত হয়। জ্ঞান এমন একটি বিষয়, যা মানুষকে উচ্চাসনে আসীন করতে পারে। যার দ্বারা মানুষের নামডাক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পৃথিবীজুড়ে।

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘বলো, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান’- (সুরা জুমার : ৯)। আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে উচ্চমর্যাদা’- (সুরা মুজাদালাহ : ১১)। আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘তোমাকে তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলো রুহ আমার রবের আদেশ ঘটিত; এ বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে’- (সুরা ইসরা : ৮৫)।

জ্ঞান অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নর-নারীর ওপর দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা ফরজ। রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, আমি হলাম জ্ঞানের শহর। জ্ঞানীর মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আবেদের ওপর আলেমের মর্যাদা হলো সমস্ত তারার ওপর চাঁদের মর্যাদার মতো।

জ্ঞান অর্জন করার জন্য করতে হয় অনেক কষ্ট, সাধনা, পরিশ্রম। এই কষ্ট-সাধনা করে যারা জ্ঞান অর্জন করে তারাই পুরো পৃথিবীজুড়ে পরিচিতি পায়, পায় জ্ঞানের স্বীকৃতি। জ্ঞান অর্জন করার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। এজন্য বলা হয়, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করো। রাসুল (সা.) বলেছেন, দ্বীনি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য জন্য যে পথ চলতে থাকে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতের পথ সহজ করে দেন।

জ্ঞান শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা প্রকৃত জ্ঞান নয়। এজন্য বলা হয়, জ্ঞান হলো যা বক্ষে থাকে, যা ছত্রে থাকে, তা নয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন’- (বোখারি ও মুসলিম)।

হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি মুআবিয়াহ (রা.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহই (জ্ঞান) দাতা’- (সহিহ বোখারী : ৭১)।

জ্ঞান অর্জনের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন ফকিহ (আলিমে দ্বীন) শয়তানের কাছে হাজার আবিদ (ইবাদাতকারী) হতেও বেশি ভীতিকর’- (তিরমিজি ও ইবনু মাজাহ)।

ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘গাছের মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে, যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হলো মুসলিমের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বল তো সেটা কোন গাছ? তখন লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছপালার প্রতি গেল। আর আমার মনে হতে লাগল যে, সেটি খেজুরগাছ। আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম।’ সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনিই আমাদের তা বলে দিন।’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তা হলো খেজুরগাছ। আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, তারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল, তা বললাম। তিনি বললেন, তুমি তখন তা বলে দিলে তা আমার নিকট এরূপ জিনিস লাভ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হতো’- (সহিহ বোখারি : ১৩১)।

অতএব জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি দুনিয়াবি জ্ঞানও অর্জন করা এবং জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার করা এবং আল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া এই দোয়া বেশি বেশি পাঠ করা ‘রব্বি জিদনি ইলমা’ অর্থাৎ ‘হে প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন’- (সুরা তোহা : ১১৪)।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close