reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ মে, ২০২২

মাছের অভয়াশ্রম সময়ের দাবি

মাছের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের চেষ্টাকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিগত এক দশকে বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে যে সাফল্য দেখিয়েছে তা যে কোনো পর্যায়ে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে, ১০ মণ দুধে এক ফোঁটা গো চনা কী করতে পারে তা আমাদের অজানা নয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ চিত্র প্রায়ই চোখে পড়ে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার অংশে ৫ শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এ কারণে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও বন্ধ করা যায়নি নদীভাঙন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্যসম্পদ। সে কারণেই বিশেষ করে ইলিশের অভয়াশ্রম রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসেছে সরকার। চারটি সুপারিশ করা হয়েছে। দখল ও দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আশাপ্রদ। তবে বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য কমাতে বা শেকড় সমেত উৎপাটন করতে না পারলে ১০ মণ দুধ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন দেশের অধিকাংশ মানুষ। তারা বলছেন, পেছনে শত্রু রেখে যুদ্ধযাত্রা কখনোই শুভ হয় না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা-মেঘনার চাঁদপুর অংশে ৭০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইলিশের ডিম পাড়া ও চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে মাছের খাদ্য সংকট। তাদের কথার সূত্র ধরেই বলতে হয়, ড্রেজিং করে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেও তারা কীভাবে বহাল তবিয়তে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন! এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। থাকলে প্রকাশ্য দিবালোকে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বসে দীর্ঘদিন ধরে এ কর্মকাণ্ড চলতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, বালু উত্তোলন চলছে এবং চলবে। তবে আমরা আশাবাদী, সরকার ইচ্ছা করলে সবই করতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ইতিবাচক কিছু একটা করে দেখাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

হালদা। এটি পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর আর কোনো জোয়ার-ভাটার নদী থেকে সরাসরি ডিম আহরণের নজির নেই। এ কারণে হালদা নদী বাংলাদেশের জন্য এক বৈশ্বিক উত্তরাধিকারও বটে। অর্থনৈতিকভাবে হালদা নদী বাংলাদেশের সাদা সোনার খনি! জাতীয় মৎস্য প্রজনন ঐতিহ্যের দাবিদার নদীটি অবহেলিত, দূষণযুক্ত নদীর তালিকায় নাম উঠেছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের গর্ব হালদা নদী। বৃহৎ রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিগনির প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এটি। চট্টগ্রামের হালদা নদী তেমনি এক সম্পদ।

বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ঘোষণার জন্য ইউনেস্কোর শর্ত অনুযায়ী হালদা নদী জাতীয় ঐতিহ্যের পাশাপাশি বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যেরও যোগ্যতা রাখে। হালদা নদীকে জাতীয় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ঐতিহ্য ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। হালদা নদীর পানি বর্তমানে বিভিন্ন কারণে মারাত্মক দূষণের শিকার। তথ্য মতে, সিডিএর অনন্যা আবাসিকের পাশে বামনশাহী খালের বাঁধের কারণে চট্টগ্রামের বিশাল এলাকার শিল্প কারখানা ও আবাসিক বর্জ্য বামনশাহী, কৃষ্ণখালী, কুয়াইশ খন্দকিয়া হয়ে সরাসরি হালদায় গিয়ে পড়েছে। এতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। হালদা রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ না নিলে জাতীয়ভাবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তবে, এশিয়ার সর্ববৃহৎ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীকে পরিবেশ বিপর্যয় ও অবাধে মা মাছ শিকার চক্র থেকে রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হলেই আরো সুদৃঢ়ভাবে মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close