reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ মে, ২০২২

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সিন্ডিকেট ও জনগণ

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে একটি। তবে উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার কারণ আছে হাজারটি। বাংলাদেশ মধ্যবিত্তের দেশ। উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্তও আছে। এমন মানুষ আছে যাদের মাসিক আয় পাঁচ হাজারের কম। এত কম ইনকামেও যে যার মতো গুছিয়ে নিয়েছে। মাসিক আয়, ব্যয়, সঞ্চয়- সবকিছুই তাদের হিসাবের মধ্যে। এরপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আর এই বিড়ম্বনায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরাই ভুক্তভোগী। বাজারের প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় বাজার হাতের নাগালের বাইরে। প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়তে হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের। নিম্নবিত্তরা প্রতিনিয়ত চড়া মূল্যে পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের দেশে নতুন নয়, বহু আগে থেকেই ঘটছে। তবে এর কোনো সমাধান নেই বলে মানুষ এক রকম সহ্য করে নিয়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সম্পর্কে অনেকের ধারণা, এর পেছনে সিন্ডিকেটের ভূমিকাই প্রধান। তবে ক্রেতাপক্ষ এবং খুচরা বিক্রেতার এখানে কোনো হাত নেই। খুচরা বিক্রেতারাও ভুক্তভোগী। তারা বলছেন এভাবে, ‘আমরাও গরিব, আমরাও চাই না দামের ঊর্ধ্বগতি হোক। কিন্তু কী আর করার- সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে আমাদেরও বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’ এ ব্যাপারে ভোক্তাদের অভিমত, এই অসহনীয় পরিবেশ থেকে বের হওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। আমরা আগেও প্রতারিত হয়েছি, এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। তবে মাত্রাটা এখন সহনীয় পর্যায়ে নেই।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ, চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যে ঘাটতি। চাহিদা বেশি, জোগান কম। দাম বাড়বেই। এটাই বিজ্ঞান। তবে, আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জোগানের ওপর কারুকাজ করা হয়। আর এই কারুকাজটি করেন দেশের প্রথিতজশা বেনিয়ারা। যারা একটি সিন্ডিকেট বৃত্তে নিজেদের সুরক্ষিত রেখেছেন। এদের হাত অনেকদূর পর্যন্ত। সব সময় থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসন জনগণের সেবায় আজ আর বাধ্য নন। বেনিয়াদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই যেন তাদের জন্ম। এরা নীতিনৈতিকতা ও আইনকানুনের সবক শেখান কিন্তু নিজেরা তা মানতে নারাজ। পরোক্ষে এরা সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে বেঁচে থাকাকে নিরাপদ বলে মনে করেন। তাই পরিশেষে বলতে হয়, রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, তখন কারো জন্য মুক্তির পথ খোলা থাকে না। এটাই আমাদের বাস্তবতা। এ বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সিন্ডিকেট গুদামে কামান দাগতে হবে। আর সে দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।

কিন্তু সরকার কামান দাগবে কীভাবে? পথ একটিই। বাজার ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে হবে। জবাবদিহি ও আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-পর্যালোচনা কম হয়নি এবং এখনো তা চলমান। তবে সোজা আঙুলে ঘি ওঠার যে কোনো সম্ভাবনা নেই তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আঙুল বাঁকা করতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। সরকারকে নমনীয় পথ পরিহার করে কঠিন থেকে কঠিনতর পথে পা বাড়াতে হবে। মনে রাখা খুবই জরুরি, প্রথমত করোনার এবং দ্বিতীয়ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন ও জোগান মারাত্মকভাবে নেমে আসতে পারে। দাম বাড়ার সম্ভাবনা শতভাগ। সুতরাং এ সময় বাজার ব্যবস্থাপনাকে কঠোরভাবে পরিচালনা করাই হবে উত্তরণের একমাত্র উত্তম পথ। আশা করি এ পথপরিক্রমায় সরকার সফলতা দেখাবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close