reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ মার্চ, ২০২২

ফেসবুকে আমরা ও সমাজ বাস্তবতা

আমাদের সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। মাঝে মাঝে এই ফেসবুক জগৎটাকে বেশ অদ্ভুত এবং মারাত্মক হাস্যকর মনে হতে পারে। সমাজে মাধ্যমটা ব্যবহার করছে না- এমন মানুষ খুব কম। সমাজেরই চোর, ডাকাত, খুনি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, নেশাখোর, প্রতারক, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, মাদককারবারি, জুয়াড়িসহ যত নোংরা মানুষ আছে; তারাও এর বাইরে নেই। সবাই ফেসবুক ব্যবহার করে আসছে।

প্রোফাইলে আল্লাহু লেখা ছবি ঝুলিয়ে সারা দিন ইউটিউবে অশ্লীল ভিডিও দেখা এখন স্বাভাবিক ঘটনা। অর্থাৎ পোশাকে সফেদ ভেতরে অন্ধকার। বাইরে কে বোঝার কোনো উপায় নেই। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যন প্রতারক সাহেদ, সে তো বিভিন্ন টিভিতে মোটিভেশনাল কথাও বলেছে। আবার সেগুলো তার পেজ এবং আইডিতে শেয়ারও করেছে। কিন্তু সে যে একজন ভ- প্রতারক, সেটা জানা গেল অনেক পরে। এভাবেই আমাদের চারপাশে অসংখ্য ভ-, প্রতারক রয়েছে; যা আমরা নিজেরাই জানি না। কিন্তু চোখের পলকেই এসব ভ- সম্পর্কে না জেনেই তাদের মাথায় তুলে ফেলছি। দোষটা আমাদের নয়। সমাজব্যবস্থার। আমাদের বেড়ে ওঠার। আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার।

‘ফেসবুকে সততাই সকল সুখের মূল’ লিখে পোস্ট দেওয়া লোকটাই কিন্তু অন্যজনের টাকা আত্মসাৎ করে ঘুমাতে যায়। সারা রাত নেশা করে ঘুমানোর আগে পোস্ট দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া ছেলেটার পোস্ট হয় এমন, ‘ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম’। যার দিনটা যায় মিথ্যা বলতে বলতে, সেও অনলাইন এসে লিখে দেয়, ‘সত্যের জয় হবে নিশ্চয়ই’। সারা রাত পর্নোগ্রাফি দেখা ছেলেটাও পোস্ট দিয়ে বলে, ‘সমাজটা নোংরামিতে ডুবে গেছে’। দিনভর ঘুষ নেওয়া লোকটা বলে, ‘আল্লাহর রহমতে বেশ ভালো আছি’। মনের ভেতর একরাশ হিংসা আর অহংকার রাখা লোকটা মাঝে মাঝে কমেন্ট করে বলে, ‘এগিয়ে যাও’। নারীর দিকে লোভাতুর চোখে তাকানো লোকটা পোস্ট দেয়, ‘নারী আমাদের মায়ের জাতি’। কপি করে পোস্ট দেওয়া ছেলেটাও মদ খেয়ে ইসলামিক পেজ থেকে কপি করে পোস্ট দেয়, ‘মদ খাওয়া হারাম’। পরপুরুষের সঙ্গে রাত জেগে অশ্লীল কথা বলা মেয়েটাও ফেসবুকে লিখে, ‘আমি আমার হবু স্বামীর জন্য সম্পদ’। পরকীয়ায় জড়িত নারীটাও লিখে, ‘আমার স্বামী আমার বেহেশত’। নিয়মিত প্রচুর টাকাণ্ডপয়সা খরচ করে শৌখিনভাবে চলাফেরা করা ছেলেটাও জানাতে ভোলে না, ‘সাধারণ জীবনযাপন ভালো লাগে’। অন্যের ওপর জুলুম করা লোকটা অনলাইনে এসে বলে, ‘মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগে’। যে মেয়েটার প্রোফাইল পিক নগ্ন, সে মেয়েটা আবার পোস্ট দেয়, ‘ছেলেরা এত নোংরা হয় কীভাবে’! ঘুষখোর লোকটিও সারা দিন অবৈধ পথে আয় করে রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেয়, ‘আল্লাহ আমাকে রহমত করছেন বলে আজ আমি সবচেয়ে ভালো’।

চিত্রটি আসলে ফেসবুকের নয়। আমাদের সমাজচিত্র। সমাজে বসবাসকারী মানুষের চিন্তা ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ফেসবুক তো একটি জড়বস্তু। মানুষ এর চালিকাশক্তি। এর ভেতরে গতির জন্ম দেয় মানব সম্প্রদায়। সুতরাং মানুষ তাকে যেদিকে পরিচালিত করবে, সে সেদিকেই যাত্রা করবে। পাশাপাশি মানুষকে নির্মাণ করে সমাজ তথা রাষ্ট্র। অর্থাৎ মানুষ হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের মুখপাত্র। এখানে পরিবর্তন না হলে ফেসবুকেও পরিবর্তন আসা সম্ভব নয়। ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। প্রয়োজনে ব্যবহার করি। না করেও উপায় নেই। আমরা গতির পূজারি। প্রযুক্তি আমাদের সে সুযোগ দিয়েছে। আমরা ব্যবহার করব। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা যেন এর অপব্যবহার না করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close