রাশেদ নাইব
পর্যবেক্ষণ
ইসলামিক ভাষ্য মতে শহীদের মর্যাদা
মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহর ইবাদত করা, সেই ইবাদত প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে মৃত্যুবরণ করল, ইসলামি পরিভাষায় তাকে শহীদ নামে আখ্যায়িত করা হয়। শহীদ শব্দটির ভাবার্থ হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে জীবন কোরবানির মাধ্যমে ইমানের সত্যতার সাক্ষ্য, সনদ, সার্টিফিকেট বা প্রত্যয়ন প্রদান।
ইসলামে শহীদদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহপাক নিজে পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তাদের তোমরা মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে তারা রিজিকপ্রাপ্ত।’ (সুরা, আল-ইমরান, আ/১৬৯)।
পবিত্র কোরআনের অন্যত্রে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এ সময় যদি তোমাদের ওপর আঘাত লেগে থাকে, তাহলে এর আগে তোমাদের বিরোধী দলের ওপরও এ ধরনের আঘাত লেগেছে। এটা তো সময়ের উত্থান ও পতনমাত্র, যা আমি মানুষের মধ্যে একের পর এক দিয়ে থাকি। তোমাদের ওপর এ সময়টা এজন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখে নিতে চেয়েছিলেন, তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কারা এবং তিনি তোমাদের মধ্য থেকে ওই লোকদের বাছাই করে নিতে চেয়েছিলেন, যারা আসলেই শহীদ বা সত্যের সাক্ষী। কেননা জালিমদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।’ (সুরা আল-ইমরান আ/ ১৪০)।
এ ছাড়া শহীদ হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো থাকা দরকার এগুলো ছাড়া কিছু মানুষ শহীদের সমমর্যাদা পাবে। আর তারা হলেন- (ক) যারা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজান মাসের সবগুলো সাওম সহিহ নিয়তের সঙ্গে পালন করে ও রমজান মাসের তারাবিহ সালাত নিয়মিত আদায় করে এবং জাকাত দেয়। (খ) রাসুল (সা.) বলেছেন, সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা হাসরের ময়দানে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। (গ) যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর সুন্নতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবে, সে শহীদের মর্যাদা পাবে। (ঘ) আসমা বিনতে ইয়াজিদ ইবনে আস সাকান (রা.) নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা পর্দানশীল নারীরা ঘরে বসে থাকি। পক্ষান্তরে পুরুষরা জুমার নামাজ, জানাজায় অংশগ্রহণ, জিহাদে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যখন তারা জিহাদে যায়, আমরা তাদের সম্পদ হেফাজত, সন্তানদের লালনপালন করি, তাহলে আমরা কি তাদের সওয়াবে ভাগ পাব কি?
রাসুল (সা.) তার সাহাবাদের বললেন, ‘যাও হে আসমা, তুমি তোমার পেছনে রেখে আসা মহিলাদের বলে দাও, স্বামীর জন্য উত্তম স্ত্রী হওয়া, তার সন্তুষ্টি খুঁজে নেওয়া, তার সম্মতি অনুসরণ করা, যেগুলো উল্লেখ করেছো তার সমান।’ (মুসলিম)। (ঙ) যে ব্যক্তি তার ধন-মালের হেফাজতের কারণে নিহত হয়েছে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। আবার যে ব্যক্তি নিজের জীবনের হেফাজতের কারণে নিহত হয়েছে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। যে ব্যক্তি দ্বীনের হেফাজতকালে নিহত হয়েছে ও নিজের স্ত্রী-সন্তানদের হেফাজতকালে নিহত হয়েছে সেও শহীদ।
সহীহ বুখারিতে হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একমাত্র শহীদ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পরে আবার দুনিয়ায় ফিরে আসতে আনন্দ পাবে না, কারণ সে আল্লাহর কাছ থেকে এমন কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছে, যা দুনিয়া সব সম্পদের সমান। সে বাস্তবে শাহাদতের মর্যাদা অনুভব করবে এবং আবার দুনিয়ায় ফিরে এসে আরো একবার আল্লাহর পথে শাহাদতবরণ করার আনন্দ অনুভব করবে।
সহিহ মুসলিমে শহীদের প্রাপ্তির বর্ণনা করেছেন হজরত আমর ইবনুল আস (রা.)। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঋণ ছাড়া শহীদের সব গুনাহ শাহাদতপ্রাপ্তির কারণে ক্ষমা হয়ে যায়। অর্থাৎ মহান আল্লাহতায়ালা ঋণ ছাড়া শহীদের ছোট-বড় সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এগুলো ছাড়াও মহানবী (সা.) শহীদের প্রাপ্তি ও মর্যাদা সম্পর্কে আরো বলেন, একজন শহীদ আল্লাহর কাছ থেকে আরো ছয়টি পুরস্কার পাবেন আর সেগুলো হলো, ‘(ক) শহীদের শরীরের রক্তের প্রথম ফোঁটা মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (খ) জান্নাতে শহীদের সম্মান ও স্থান দেখানো হবে। (গ) শহীদের কবর আজাব মাফ করে দেওয়া হবে। (ঘ) শহীদ ব্যক্তি কেয়ামতের ভয়ানক-আতঙ্কজনক বিভীষিকা থেকে নিরাপদ থাকবে। (ঙ) শহীদের মাথায় মহাসম্মানিত জান্নাতি মুকুট পরানো হবে, যা মূল্যবান ইয়াকুত পাথর দুনিয়ার সব সম্পদ থেকে উত্তম এবং বাহাত্তরজন জান্নাতি হুরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে। (চ) একজন শহীদ তার নিকটাত্মীয়দের থেকে ৭০ জন লোকের জন্য সুপারিশ করার ক্ষমতা দেওয়া হবে।’ (জামে আত-তিরমিজি)।
পরিশেষে বলা যায়, মহান আল্লাহর কাছে একজন শহীদের জন্য রয়েছে আলাদা মর্যাদা ও সম্মান এবং তাকে ইসলাম প্রদান করেছে বিশেষ গুরুত্ব। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত শহীদের জন্য মহান আল্লাহরতায়ালার কাছে দোয়া-প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহতায়ালা সবাইকে শহীদদের প্রকৃত মর্যাদা ও সম্মান প্রদান ও অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
"