reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ জানুয়ারি, ২০২২

টিসিবি আছে টিসিবি নেই

টিসিবির জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৭২। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টিসিবিও একটি স্বাধীন দেশে আবির্ভূত হয়। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক সুনামণ্ডদুর্নাম কামিয়েছে। উন্নয়নের চমক দেখিয়েছে। কিন্তু টিসিবি একটি জনকল্যাণ প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সুনাম বা সফলতার কোনো নিদর্শন দেখাতে পারেনি। যেটুকু আছে তা শুধু ব্যর্থতার। প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ যেখান থেকে যেভাবে শুরু সেখান থেকে এক মিলিও বিকশিত হতে পারেনি। তবে দুর্নীতির মাত্রা বিকশিত হওয়ার আভিযোগ আগের সব মাত্রাকে অতিক্রম করেছে। আমরা জানি, বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রশ্নে টিসিবির ভূমিকা অনেক। আর টিসিবির জন্মও সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই। তবে গত ৫০ বছরে বাজার নিয়ন্ত্রণে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কোনো নিদর্শন আমরা পাইনি। গতানুগতিক ধারায় প্রতিষ্ঠানটি চলে এসেছে। এখনো চলছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে হিমশিম খাওয়া মানুষের কাছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের ওপর আগ্রহ বরাবরই বেশি। বর্তমানে এর ব্যাপকতা বেড়েছে। আগে স্বল্প আয়ের মানুষ শুধু টিসিবির কথা ভাবত। এখন তা সবারই নজর টিসিবির ওপর। কারণটাও সবার জানা। খোলাবাজারে যাওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে সবার দৃষ্টি এখন টিসিবির দিকে। যোগ্যতা হারানোর অর্থ ক্রয়ক্ষমতা পড়ে যাওয়া। ক্রয়ক্ষমতা পড়ে যাওয়ায় টিসিবির পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। তবে চাহিদা বাড়লেও জোগান বাড়েনি। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকে বহন করা পণ্য কিনতে ভোগান্তি জেনেও স্পটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। করোনা অতিমারির পর থেকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আর সে কারণেই টিসিবির পণ্য সংগ্রহে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ক্রেতাপক্ষের সংখ্যা। এখন চলছে লাইনে দাঁড়ানোর প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে পেছনের সারির অনেককেই ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। কারণ; জোগানের স্বল্পতা।

বাজারে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। যেখানে টিসিবি দিচ্ছে ১০০ টাকায়। বাজারভেদে খোলাবাজারে ডাল প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা। যেখানে টিসিবি দিচ্ছে ৬০ টাকায়। খোলাবাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯৫ টাকায়। টিসিবির ট্রাকে ৫৫ টাকায়। টিসিবির দেওয়া দর আর খোলাবাজারের দর আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে ব্যবধানটা জানিয়ে দেয়। ফলে ক্রয়ক্ষমতার নিচে থাকা মানুষের ভিড় এখানে বাড়বে- এটাই স্বভাবিক। আর ক্রয়ক্ষমতার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যাও এ দেশে কম নয়। করোনা এ সংখ্যাকে দ্বিগুণে এনে দাঁড় করিয়েছে। মানুষের মধ্য থেকে করোনার শঙ্কা এখনো কাটেনি। বিশ্বজুড়ে নতুন করে নতুন নামে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। যেকোনো সময় তা আবার মহামারিরূপে ধেয়ে আসতে পারে। সুতরাং সময় থাকতে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে দেশ-জাতি ও রাষ্ট্রকে সব দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে বেনিয়াদের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।

আমরা মনে করি, মোটা দাগে একটি কাজ আমাদের এ সমস্যাকে অনেকাংশে দূরীভূত করতে পারে। আর কাজটি হলো, ট্রাকের বদলে টিসিবির নেতৃত্বে দেশজুড়ে একটি চেইনশপ গড়ে তোলা। যেখানে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের জোগান থাকবে। বিষয়টিকে বাণিজ্যিকভাবে বিবেচনায় নিতে হবে। এতে বেনিয়াদের একচেটিয়া ও দৌরাত্ম্য দূর হবে। বিশাল বেকারত্বের অনেকটা মোচন হবে। সরকার ভর্তুকির হাত থেকে রেহাই পাবে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হবে। আমরা আমাদের চিন্তার কথা জানালাম। কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close