reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ জানুয়ারি, ২০২২

তিস্তা রক্ষাই এখন সময়ের দাবি

নদীমাতৃক দেশে যদি নদীর অস্তিত্ব না থাকে, তাকে আমরা মাতৃক বলার অধিকার রাখি কি না- এ প্রশ্ন আজ সর্বজনবিদিত। বাস্তবতা বলছে, আমরা সে অধিকার হারাতে বসেছি। দেশের অধিকাংশ নদী আজ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। অনেক নদীর অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ রকম এক পরিবেশ-পটভূমিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন। গত শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশ্বের ১৫ দেশের মানুষ একত্র হয়ে বলেছে, ‘তিস্তা নিয়ে সমন্বিত অববাহিকাভিত্তিক একটি ব্যবস্থাপনা দরকার। এই নদীকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না। একে প্রাণ-প্রকৃতির অংশ হিসেবে দেখতে হবে। আমাদের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে এই নদীকে দেখতে হবে। সর্বোপরি একে একটি জীবন্ত সত্তা হিসেবে দেখাই হবে সভ্যতার নিদর্শন।’

তিস্তা বাংলাদেশের পাঁচটি প্রধান নদীর একটি, যা এখন রুগ্ণ, জীর্ণ এবং হাসপাতালের সিসিইউতে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর মতো বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, রোগের কারণ জানা গেলেও চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনো ডাক্তারের সন্ধান এখনো মেলেনি। হাতুড়ে ডাক্তার দিয়েই কাজ সারা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এ যাবৎ অনেক কথাই বলেছেন, এখনো বলছেন। তবে তাদের কোনো পরামর্শই কেউ কানে তোলেননি। যে যার মতো করে স্বার্থ রক্ষায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। তাদের এই স্বার্থরক্ষার ফলাফলে তিস্তা হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এই হারিয়ে যাওয়াকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। একই সঙ্গে তাদের সে ক্ষমতাও নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা তাদের অবস্থান থেকে তাদের মতামত দেওয়া থেকে বিরত থাকেননি। তারা বলেছেন এবং বলছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তিস্তাসহ দেশের সব নদণ্ডনদীর পানি এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। একে রক্ষা করা দরকার। কারণ এ অঞ্চলের নদীগুলো শুধু পানির উৎস নয়; এটিকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাই পানিকেন্দ্রিক এই জীবন-জীবিকা রক্ষায় তিস্তার মতো নদীকে রক্ষা করতে হবে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে মানুষ ও প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা করে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। এখানে একটি কথা না বলেই নয়, জীবন থেকে রাজনীতিকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কেননা উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। তাই রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন করে নয়, মানুষের কল্যাণে রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই হবে বিচক্ষণতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যদিও বিশ্বে আজ সেই রাজনীতির বড় অভাব। আর সে কারণেই শুধু নদী নয়, প্রকৃতিও হারাতে বসেছে তার নিজস্ব বৈভব।

আমরা মনে করি, তিতাস নিয়ে অনেক দেনদরবার হয়েছে। অনেক পানি ঘোলা হয়েছে। সেই ঘোলা পানিতে অনেকে মাছ শিকারের উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেক কালক্ষেপণ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নদী তার যৌবন হারিয়ে অকালবৃদ্ধে পরিণত হয়েছে। মানুষ হারিয়েছে তার জীবন-জীবিকা। প্রকৃতি হারিয়েছে তার রূপণ্ডলাবণ্য। এর মধ্যেই চলছে রাষ্ট্র ও সমাজপতিদের নানামুখী আলোচনা ও পর্যালোচনা। এ চিত্র নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ সময় ধরে যা চলে আসছে। সম্ভবত আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সমাধান! সমাধান প্রশ্নে বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে হবে। নতুন পথের সন্ধান করতে হবে। আর সেই পথই দেখিয়ে দেবে তিস্তার ভবিষ্যৎ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close