স্বাস্থ্যবিধি না মানাই হবে আত্মঘাতী
দেশ যেন আবার পেছনের দিকেই হাঁটছে। অন্তত করোনার ক্ষেত্রে এ কথা বলাটা অযৌক্তিক হবে না। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ বিস্তারের মধ্য দিয়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এবং শনাক্তের হার ফিরে গেল ২৫ সপ্তাহ আগের পর্যায়ে। গত শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৪৩৪ জন। মারা গেছেন ১২ জন। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে দেশের হাসপাতালগুলোতে ‘আশঙ্কাজনক হারে’ রোগী ভর্তি হচ্ছে। তথ্যটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের। তিনি বলেছেন, প্রতিদিনই রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে, যদিও মৃত্যুর হার এখনো কিছুটা কম। তিনি সংক্রমণ বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি না মানাকেই দায়ী করেছেন। শুধু তার কথার ওপরই নয়, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আজকের পৃথিবীতে গৃহীত এটিই সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপত্র। করোনা নির্মূলের কোনো ওষুধ আমরা এখনো পাইনি। আবিষ্কারও হয়নি। যেটুকু পাওয়া গেছে তার পুরোটাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা না চলার ওপর। মাস্ক ব্যবহারকে বলা হচ্ছে প্রধান প্রতিরোধক। ব্যবহারকারীরা এখান থেকে ৮০ ভাগ প্রতিরোধ নিশ্চয়তা পেতে পারেন। বাংলাদেশ এই ব্যবস্থাপত্রকে মেনে চলার চেষ্টা করছে। সরকারের তৎপরতাও বেশি। সাধারণ মানুষ এর মর্মবাণী কতটা আত্মস্থ করতে পেরেছে, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, আমরা আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যেতে চলেছি; যা আমাদের জন্য কোনো ভালো খবর নয়।
আমরা জানি, সংক্রমণ ব্যাপকতা পেলে বাংলাদেশ কতদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাস্তবতার কাছেই আমরা শিখেছি। দেখেছি সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে দেশের অর্থনীতির ওপর। গত দুই বছরে আমাদের অর্থনীতি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাকে মেরামত করে সোজা হয়ে দাঁড়ানো আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরপর যদি দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হই, তখন বোধহয় কোমর সোজা করে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আগে থেকেই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আর এই প্রয়োজনের ৮০ শতাংশই মেটাতে হবে সাধারণ মানুষকে। নিজ থেকে নিজ কাঁধেই তুলে নিতে হবে সে দায়িত্ব। সরকারের একার ওপর এ দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হবে অনেকটা আত্মঘাতীর মতো।
মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ বলছে, বাস, ট্রেন, হোটেল ও বাজারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবখানেই অনীহা। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বাসে যত সিট তত যাত্রী ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও তা কেউ মানছেন না। হোটেল ও রেস্টুরেন্টে টিকা সনদ নিয়ে ঢোকার নির্দেশনা থাকলেও সর্বত্রই উপেক্ষিত হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারের চিত্র আরো ভয়াবহ। নির্দেশনা থাকার পরও সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চিহ্নটুকুও পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যা দেশ ও দশের জন্য একটি অশনিসংকেত। সব দায়িত্ব সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়ে পুরো দায় সরকারের ওপর চাপানো ন্যায়সংগত হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। কোনো যুক্তি বিচারে তা বিবেচ্য হতে পারে না। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করার পর সরকার ব্যর্থ হলে তখন সরকারের ওপর দায় চাপানো যেতে পরে। অতএব সাধারণ মানুষকে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। পাশাপাশি মান্যতাকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আমরা মনে করি, পৃথিবীতে মানুষ নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। সুতরাং নিজের সুরক্ষা নিজেকেই সুসংহত করতে হবে। যিনি নিজের সুরক্ষায় এগিয়ে আসেন, তিনিই পারেন তার পরিবারের সুরক্ষা দিতে। পরিবার সুরক্ষা পেলে সমাজ ও রাষ্ট্র যে সুরক্ষিত থাকবে, তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। অতএব আসুন, আমরাও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি কিছুটা দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে এগিয়ে যাই।
"