মো. সায়েদ আফ্রিদী

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২২

মুক্তমত

প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে

বিমানবন্দর নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে প্রবাসীদের আনাগোনা প্রতিনিয়ত। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া এবং আসার একমাত্র উপায় বিমান অর্থাৎ আকাশপথ। এই আকাশপথে আরোহণ করার আগে এবং পরে যাত্রীদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রাখাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য তৈরি হয়েছে বিমানবন্দর। একজন যাত্রীকে দেশ ত্যাগ এবং দেশে আসার পর বিমানবন্দরে বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনেই আসতে হয়।

বাংলাদেশে লাখ লাখ প্রবাসী নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করে। কেউ পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাত-ডাল দিতে পারি দেয় সুদুর প্রবাসে, কেউবা পর্যটক হিসেবে ঘুরতে যায়, কেউবা চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে যায়। তবে দেশের বৃহৎ একটা অংশ বিদেশে কর্মসংস্থানের খোঁজে যায়, যাদের প্রকৃত প্রবাসী হিসেবে আমরা মনে করি।

স্বাভাবিকভাবেই যারা বিদেশ ফেরত আসে, তাদের মুখের দিকে পরিবার পরিজনসহ সবাই তাকিয়ে থাকে। বিদেশ থেকে সবার জন্য নানান কিছু নিয়ে আসবে- এটাই সবার প্রত্যাশা থাকে। তাই তো নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের জন্য বিভিন্ন মূল্যবান কিছু নিয়ে আসে যার যার সাধ্যমতো। হয়তো কারো কারো বিশাল একটা স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে এসব ব্যাগ, লাগেজের মধ্যে। শুধু একজন প্রবাসী শ্রমিকের ক্ষেত্রেই এমন নয়। বরং দেখা যায় বাংলাদেশ থেকে কেউ বিদেশে চিকিৎসা করতে গেলেও ২-৪টা লাগেজ ভরে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসে।

সমাজের শ্রেণিব্যবধান ভেদে বিমানবন্দরে থাকে ভিআইপি লাউঞ্জ। সেখানে সমাজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসন হয়। তাদের আসবাবপত্র সব সময়ই নিরাপদ থাকে এসব ভিআইপি লাউঞ্জে। থাকে আলাদা মানসম্মান, আলাদা তদারকি, আলাদা আতিথেয়তা। বলা চলে, ঊর্ধ্বতন এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিদেশ ভ্রমণ কোনো রকম বাধা-বিঘœ ছাড়াই সুচারুরূপে হয়ে যায়।

কিন্তু যত জটিলতা সেটা হলো সাধারণ পাবলিক তথা যারা প্রকৃত অর্থে প্রবাসী, যাদের বৃহৎ রেমিট্যান্স বাংলাদেশ আসে। যাদের রেমিট্যান্সের বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এতটা সচল থাকতে পারে। যারা দেশের জন্য দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য দিন-রাত প্রবাসে কাজ করে পরিবার পরিজন দেশের মাটিতে রেখে।

বিভিন্ন সময় দেখা যায় এমন রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সঙ্গে বিভিন্ন অহেতুক আচরণ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনিয়মকে নিয়ম শেখানো হয়। দেশের মাটি ত্যাগ এবং আগমন ২টি করতেই নানান হয়রানির স্বীকার হতে হয়। হুটহাট ভাড়া বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়, ঠুনকো অভিযোগে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে রাখা, তাদের রেখেই বিমান ছেড়ে দেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি নিয়মিত ঘটনা।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও দেশে এমন টাকা পাঠানোর মেশিনদের ন্যূনতম কোনো মর্যাদা দেওয়া হয় না। এমনকি বিদেশে কোনো প্রবাসী মারা গেলে সরকারিভাবে তার মৃতদেহটা পর্যন্ত দেশের মাটিতে আনার ব্যবস্থা করা হয় না। এ ছাড়া তো নানান অবহেলা রয়েছেই। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত প্রবাসীদের লাগেজসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাগ চুরি হয় বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকে। একজন প্রবাসীর প্রবাসজীবনের কষ্টের মালামাল যদি দেশে এসে এমন নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে চুরি হয়ে যায় সেটার কষ্ট ভুক্তভোগীই বোঝে। সারাজীবনের কষ্টে উপার্জিত মহামূল্যবান জিনিসপত্র, টাকাপয়সা দেশের মাটিতে পা দিতেই শেষ হয়ে যায় যেটা ভাবতেও গায়ে শিহরন জেগে ওঠে।

এভাবে প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে। এ যেন একটা কৃত্রিম মহামারি। এমন নিরাপত্তাসম্পন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই হচ্ছে চুরি, ছিনতাই। ভেঙে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত প্রবাসীর সারাজীবনের স্বপ্ন। অথচ প্রসাশন নির্বিকার, চুপচাপ। মাঝেমধ্যে তাদের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নিয়ে চলে অপরাধী ধরা। এখানেই যেন সব দায়িত্বের অবসান। এই অপরাধী ধরার যে একটা সৎ ইচ্ছে, সেটাও খুব নগণ্য। মাঝেমধ্যে খুব উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অপরাধী ধরতে উঠে পড়ে লাগে, সেটাও অনেকটা মিডিয়ার দায়িত্বশীলদের তদারকিতে।

প্রশাসনের বৃহৎ কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না এসব নিয়ে। বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আসছে বিমানবন্দরে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। আর এমনটা হওয়াই তো স্বাভাবিক আসলে। কেননা এমন নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কীভাবে প্রতিনিয়ত চুরি হয়েই যাচ্ছে? বা চুরি প্রতিরোধে কেনই বা বৃহৎ, জনবান্ধব কোনো ভূমিকা নেওয়া হয় না! প্রতিনিয়ত এসব কার্যক্রম আমাদের জন্য, আমাদের দেশের জন্য লজ্জা। আমাদের বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য লজ্জা। এসব অনিয়ম, অবিচার, দুর্নীতির কারণে প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগে ওঠে।

এমন অমানবিক কার্যক্রম বারবার হয়ে যাচ্ছে অথচ বিমানবন্দরের দায়িত্বশীলর কারো খুব বেশি জবাবদিহি করতে দেখা যায় না। তাদের বিচারের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিমানবন্দরে কোনো যাত্রী থাকাকালীন নিঃসন্দেহে তাদের সব দায়িত্ব বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। বিমানবন্দরে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে হবে। এসব অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায় অবশ্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সরকারকে বহন করতে হবে। বিমানবন্দরকে প্রকৃত নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করা এখন সময়ের দাবি। আর কোনো প্রবাসীদের কষ্টে উপার্জিত মহামূল্যবান জিনিসপত্র দেশের মাটিতে এসে হারিয়ে না যাক, এটাও প্রবাসীদের একাধিক দাবির মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া লাখ লাখ প্রবাসীর জন্য প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন জনবান্ধব নিয়মকানুন করতে হবে। যে নিয়মকানুন করলে প্রবাসীরা প্রকৃত অর্থে লাভবান হবে, অর্থাৎ তাদের স্বার্থরক্ষার বিভিন্ন নিয়মকানুন করতে হবে। অযথা নিয়মের নামে অনিয়ম দিয়ে তাদের নির্যাতন, নিপীড়ন, হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

sayedafridz99@gmail

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close