জাফরুল ইসলাম

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২২

দৃষ্টিপাত

তাইওয়ান প্রশ্নে নতুন সংকটের সম্ভাবনা

বিশ্ব রাজনীতি আজ একের পর এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পিছু ছাড়ছে না। ইউক্রেন, তাইওয়ান, তালেবানসহ বেশ কিছুসংখ্যক সংকট বর্তমান বিশ্বে বিরাজমান। ঠিক এমনই এক সংকটের নাম তাইওয়ান, যা সংঘাতের দিকে ধাপিত হচ্ছে। তাইওয়ানকে নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে বিশ্বের দুই পরাশক্তির অবস্থান। একদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে চীন।

তাইওয়ানকে নিয়ে আলোচনার আগে একটা বিষয় খোলাসা করা দরকার। আর সেটা হলো, যুক্তরাষ্ট্র তার মূলনীতিতে একটি বিষয়কে মেনে চলা, আর সেটা হলো গণতন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্র চায় বিশ্বের সব দেশ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হবে। যার ফলে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে চীন-রাশিয়া চায় বিশ্বের দেশগুলো কমিউনিস্টে বিশ্বাসী হয়ে বিশ্বের দেশগুলো তাদের নেতৃত্ব মেনে নেবে। যার ফলে দেখা যায় গণতন্ত্রের সঙ্গে কমিউনিস্টদের স্নায়ুযুদ্ধ। যে যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে এত আতঙ্ক। তাইওয়ানকে নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেটাও ওপরের মৌলিক নীতির কারণে।

তাইওয়ানের অফিশিয়াল নাম রিপাবলিক অব চায়না। যেটা একসময় পুরো চীনের অংশ ছিল। ১৯৪৯ সালে মাও জে দং-এর বিপ্লবের পর ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চীনের অধীনস্থ থেকেছে। বর্তমানে তাইওয়ান স্বশাসিত হলেও পৃথিবীর কম দেশই স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বের কম গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি দেশ স্বীকৃতি দেয়। সংকটের সূচনা; চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর ক্ষমতাসীন দল কুওমিনটাঙ প্রধান চিয়াং কাইশেক অনুসারীদের নিয়ে তাইওয়ানে পালিয়ে যায়। এরই মধ্যে কোরীয় যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাধার মুখে তাইওয়ানকে মেইনল্যান্ড চায়নার সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেখান থেকে তাইওয়ান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে গণতন্ত্রচর্চা করে শাসনকার্য পরিচালনা করে আসছে। এ কাজে সাহায্য করেছে ডিপিপি নামের গণতান্ত্রিক সংগঠন।

তবে তাইওয়ানের শাসনব্যবস্থা কখনো চীন মেনে নেয়নি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দিয়েছেন তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের চীনের সঙ্গে একীভূত করবেন। এখন কথা হলো এ কথা বলার উদ্দেশ্য কী? তাইওয়ানের অন্যতম রাজনৈতিক দল কুওমিনটাঙ (কেএমটি)। গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে তাকে পরাস্ত করে ক্ষমতা দখল করে সিপিপি। দীর্ঘসময় ধরে দুদলের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক থাকলেও বর্তমানে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তাইওয়ানের ওপর। তাইওয়ানের জনগণ এখন আর চীনের সঙ্গে একীভূত হতে চায় না। অন্যদিকে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রধান শর্ত হচ্ছে এক চীননীতিকে স্বীকৃতি দিয়ে মেনে নিতে হবে। যার পরোক্ষ অর্থ হলো, স্বেচ্ছায় চীনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার, যা কখনো সম্ভব নয়। কারণ আমরা জানি বর্তমানে চীনের সঙ্গে স্থল ও জল সীমানা নিয়ে সীমান্তবর্তী ১৭টি দেশের সঙ্গে সংকট চলছে। যাদের সঙ্গে সংকট চলছে তারা কখনো চাইবে না তাইওয়ান চীনের সঙ্গে একীভূত হোক।

চীন যদি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তাহলে সেটা সে দেশগুলোর জন্য অশুভ পরিণতি হিসেবে দেখা দেবে। কারণ তারা কেউই কমিউনিস্টে বিশ্বাসী নয়। অন্যদিকে এখানে সবচেয়ে বৃহৎ পরাশক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের জোট কোয়াড এবং যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জোট অকাস আমেরিকা, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া। তাই তাইওয়ানে যুদ্ধ শুরু হলে সেটা দ্রুত তৃতীয় বিশ্ব বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হবে। যুক্তরাষ্ট্র চায় তাইওয়ান তার নীতিতে অনড় থাকুক। কারণ তাইওয়ান যদি গণতন্ত্র শাসনব্যবস্থা কায়েম করে তাহলে তাদের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক সৃষ্টি হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হবে অন্যতম প্রাপ্তি। তাইওয়ানকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তখন চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায় সেদিকে লক্ষ দিয়েছে।

তাইওয়ান প্রাচীনকাল থেকেই চীনকে লিড দিয়ে আসছে। সেই তাইওয়ান যদি যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দখলে নিয়ে আসতে পারে তাহলে চীনের উত্থান কিছুটা প্রশমিত করা সম্ভব হবে। আর চীন যদি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তাহলে চীনের আগ্রাসন বাকি দেশগুলো সহজভাবে মেনে নেবে না। এখানে যুক্তরাষ্ট্র একটি কৌশল অবলম্বন করেছে আর সেটা হলো জোট। কারণ এই জোটগুলোই পারে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়াকে পূরণ করতে। চীন যদি আগ্রাসন চালায় তাহলে তার বিরুদ্ধে যাবে বিশ্বের প্রায় ১৩৪টি দেশ। অন্যদিকে জাতিসংঘ তখন চীনের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বলে দিয়েছে তারা তাইওয়ানের জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে পূরণ করবে। তাইওয়ানের স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এখন দেখার পালা তাইওয়ানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের ভূমিকা কোনদিকে গড়ায়।

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close