রাশেদ নাইব

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

ইসলাম

ইসলামি সমাজ বিনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা

একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামি সমাজ বিনির্মাণ আমাদের জন্য অতিব জরুরি। কারণ ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলতে সহায়ক হয়। তবে এর আগে জানা আবশ্যক, সমাজ কাকে বলে। সমাজের ব্যাপারে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মতামত রয়েছে। তবে সাধারণভাবে সমাজ বলতে আমরা যা বুঝি। যেমন- একদল মানুষ অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে ও বেঁচে থাকার তাগিদে সাধারণ উদ্দেশ্যগুলো চরিতার্থ করতে যখন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকে, তখনই তা সমাজে রূপ নেয়। অর্থাৎ, স্বার্থগত কারণে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠা জনগোষ্ঠীকে সমাজ বলে। এছাড়া কিছু সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, সমাজের কোনো ধরাবাঁধা সংজ্ঞা হয় না।

এখন আসি ইসলামি সমাজের ব্যাপারে। ইসলামি সমাজব্যবস্থাতে থাকবে কোরআনের শাসন। যেখানে একজন মুসলিম ধর্মীয় বিধিনিষেধকে স্বচ্ছভাবে মেনে নেবে। সবকিছুর ফায়সালা কোরআন অনুযায়ী হবে। যেমন জিহাদ/তথা ইসলামি সমাজ নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন। দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের দ্বীন। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বে এবং এ কিতাবেও। যাতে রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব তোমরা সালাত কায়েম কর, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী! এই আয়াত থেকে এটাও বুঝা যায় যে, ইসলামিক সমাজে নামাজ থাকবে প্রতিষ্ঠিত এবং সবাই জাকাত আদায় করবে। অর্থাৎ ইসলামি সমাজের সবকিছুই ইসলামিক নিয়ম অনুসারে পরিচালিত হবে।

মহান আল্লাহতায়ালা অপর এক আয়াতে এরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদের জমিনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর এরপর যারা কুফরি করবে তারাই ফাসিক।

অতএব, আমরা এটাও জানতে পারি যে, ঈমানের পরে যদি আমরা সৎকর্ম করতে পারি তাহলে অবশ্যই ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর পরেই মহান আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেবেন। আমরা যদি ইসলামি সমাজব্যবস্থা পেতে চাই, তাহলে ইসলামিক রীতি-নিয়ম ক্রমেই মেনে চলতে হবে। এই মর্মে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং রোজা রাখে, সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুন বা জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাত দান করা আল্লাহর জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। লোকেরা বলল হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমরা কি এই সুসংবাদ লোকদের জানাব না। তিনি বলেন, আল্লাহ তার পথে জিহাদকারীদের জন্য জান্নাতে ১০০টি মর্যাদার স্তর তৈরি করে রেখেছেন। যেকোনো দুটি স্তরের মাঝখানে আসমান ও জমিনের পার্থক্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে জান্নাতুল ফেরদাউসের জন্য প্রার্থনা করো। কারণ সেটিই জান্নাতের সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ অংশ। এরই ওপর মহান আল্লাহর আরশ। যেখান থেকে জান্নাতের ঝরনাগুলো প্রবাহিত হয়। (সহিহ বোখারি)

পরিশেষ আমরা জানলাম, ইসলামি সমাজ তথা কোরআনের সমাজ কায়েম করার পরে কেউ যদি নিজ জন্মভূমিতেও মৃত্যুবরণ করে তবু সে জিহাদে যাওয়ার সওয়াব পাবে। তবে জিহাদের মর্তবা মহান আল্লাহর কাছে অত্যাধিক। আমরা যেন ইসলামি সমাজ বিনির্মাণ করতে পারি, আল্লাহতায়ালা আমদের সেই তওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close