reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে রেওয়াজ নেই

আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে কোনো কিছুর দাম একবার বাড়লে তা আর কখনোই কমে না। এটাই রেওয়াজ। কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। এখানে অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মূল্য কমতে থাকে। তবে সব মানুষ নয়। মধ্যবিত্ত্ব থেকে শুরু করে নিচের দিকের অগণিত মানুষ। যদিও সমাজে এদের দাম সব সময়ই নিচের দিকে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা আরো নিম্নগামী হয়। এটাই দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা একটি অলিখিত নিয়ম এবং চালচিত্র। পেছনে অনেক কার্যকারণ আছে। যার মাঝে অন্যতম কারণটি হলো বণ্টনব্যবস্থা। এখানে যে বৈষম্যের জন্ম দেয়, সেখান থেকেই তার সূত্রপাত। অসম বণ্টনব্যবস্থাই মানুষের মাঝে তৈরি করেছে এই বৈষম্য। এরপর রয়েছে আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনার অনিয়ম। যেখানে ক্রেতাপক্ষের গলায় ছুরি বসিয়ে লুট করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ। ফলে বেড়ে যাচ্ছে মানুষের দুঃখ, কষ্ট আর ভেঙে পড়ছে সমাজের নান্দনিক কাঠামো।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও তার সুফল পাচ্ছে না দেশের মানুষ। তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে বাড়ানো বাস-ট্রাক ও লঞ্চের ভাড়া আর কমেনি। ক্ষুব্ধ মানুষের মন। কিন্তু তাতে বেনিয়াদের কোনো বিকার নেই। তারা অপেক্ষায় আছেন আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধির। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জ্বালানির দাম না কমালে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নতুন কিছু নয়। জ্বালানি তেলের সঙ্গে উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে উৎপাদিত পণ্যের সম্পর্কটা পারিবারিক। যেকোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আমাদের সমাজ একটি পরিবার। এই সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হন বসবাসকারী সদস্যরা। বিশেষ করে সাধারণ সদস্য। যাদের ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোনো অধিকার থাকে না।

দাম বাড়ানোর পেছনে অজুহাত ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি আর ভারতে পাচারের আশঙ্কা। তখন প্রতি ব্যারেলের দাম ছিল ৮৫ ডলার। কয়েক দফায় কমে এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৭০ ডলারে। প্রতিবেশী ভারতেও দাম কমানো হলেও বাংলাদেশে তা স্থির রয়েছে। তবে তেলের দামের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের। তারা বলছেন, প্রভাব বিবেচনা না করে দাম বাড়ানোর ফল অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। এদিকে লোকসানের কবলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরই লাভে ফিরেছে বিপিসি। গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবার পড়ে যায়। ডিসেম্বর জুড়েই তা স্থিতিশীল রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন দাম কমানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও বিপিসিকে লোকসান গুনতে হবে না। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দাম বাড়ানো-কমানো যেতে পারে। এ তো গেল তেলের দাম কমা-বাড়া নিয়ে কথোপকথন। কিন্তু তেলের দাম কমাকে কেন্দ্র করে সরকার যদি যানবাহনের ভাড়া কমার কথা ঘোষণা করে, তখন ব্যবসায়ীরা তা কীভাবে গ্রহণ করবেন? সেখানে ব্যবস্থাপনা কতটা শক্তিশালী? এ প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, কর্মটি সহজ নয়। এ যাবত আমরা যা দেখেছি তা হলো বাঁশের চেয়ে কঞ্চির শক্তি বেশি। সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারেনি পরিবহন নেতাকর্মীদের বাধার মুখে। এ যেন শাঁখের করাতের মতো। যেতেও কাটে আসতেও কাটে। আর এই যাওয়া-আসার মাঝখানেই সাধারণের বসবাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close