reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ জানুয়ারি, ২০২২

আস্থাহীনতাই বড় সংকট

আস্থা-সংকটে ভুগতে ভুগতে আমরা যেন আজ সুতোর ওপরে ঝুলে আছি। যেকোনো মুহূর্তে পড়ে যাওয়ার আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। কেউই কারো ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। এমনকি নিজের ওপরেও নিজের আস্থাটুকুও হারাতে বসেছি। আপাতদৃষ্টিতে দেশের সামাজিক অবস্থা অনেকটা এ রকম। অথচ পরস্পরের ওপর এই আস্থাকেই সমাজের মেলবন্ধন, একটি নান্দনিক সমাজকে বেঁধে রাখার প্রধান উপকরণ। পাশাপাশি বলা যায়, আস্থার উৎসস্থল হচ্ছে বিশ্বাস। সমাজে সেই বিশ্বাসের অপমৃত্যু হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ঠকতে ঠকতে মানুষ এখন আর বিশ্বাসকে ধরে রাখতে পারছে না। অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির সর্বস্তরেই এই ভাঙনের সুর। কিন্তু কেন?

জবাবটা কঠিন নয়। মানুষের লোভের মাত্রা যখন সব সীমাকে অতিক্রম করে, তখন বিশ্বাসের ব্যারোমিটার সেই গতিতে তলানির দিকে ছুটতে থাকে। লোভের সঙ্গে লাভের একটি আন্তরিক যোগাযোগ রয়েছে। লোভের মাত্রা যতই বাড়তে থাকবে, লাভের অঙ্ককে ঠিক ততটাই বাড়াতে হয়। স্বাভাবিক কারণে সমাজে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, একে থামানোর কি কোনো বিধিবিধান নেই! নেই বলা যাবে না, আছে, তবে তা কাজির গরু কেতাবে থাকার মতো গোয়ালে নেই। সরকার এ ব্যাপারে চেষ্টা কম করেনি। কিন্তু সব চেষ্টা কাক্সিক্ষত সাফল্য বয়ে আনতে পারেনি। তাই আজ দাবি উঠেছে, ‘আস্থা ফেরাতে উদ্যোগী হতে হবে’।

দেশে উদ্যোক্তার অভাব নেই। আমরা নতুন নতুন উদ্যোক্তাও দেখেছি এবং দেখছি। সম্প্রতি ই-কমার্সও দেখলাম। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে আরো একটি অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার ঘটনা সংযোজিত হলো। প্রতারণা ও প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে দ্রুত বাড়তে থাকা ই-কমার্স খাত গত বছরে বেশ ধাক্কা খেয়েছে। ধরা খেয়েছে সাধারণ মানুষ। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন হাজারো গ্রাহক। যদিও হাজার-কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সিইও। গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান লোপাট করেছে তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকা। এর পরও আসছে নতুন উদ্যোক্তা। সাধারণের সর্বস্বান্ত হওয়ার পর নতুনরা আস্থা ফেরাবে কীভবে- তা এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে শর্টকাট রাস্তা অবশ্য একটি আছে। ভুক্তভোগীদের দেয় টাকা ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু কে নেবে সে দায়! এখনো পর্যন্ত কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সম্ভবত যাবেও না। বিষযটি এভাবে থমকে থেকে কিছুদিন পর তা হারিয়ে যাবে। যারা এই অনৈতিক কর্মটি করেছেন, তাদের কথাও ডিপফ্রিজে চালান করা হবে। অতঃপর তথৈবচ। জয় আস্থাহীনতার জয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ তদারকি প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতায় ই-কমার্স খাতে অনিয়ম হয়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সক্ষমতা না বাড়ালে অঘটন আরো ঘটবে। তাই সময় থাকতে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

বিশ্লেষকরা যা বলেছেন তা গতানুগতিক ব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না। প্রতিবারই আমরা এ ধরনের প্রতিটি ঘটনায় একই ধরনের ব্যাখ্যা শুনে আসছি। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাদের সমস্যা সুরাহার প্রশ্নে কোনো জ্ঞানগর্ভ দিকনির্দেশনার কথা শোনা গেল না। শুধু বিশেষজ্ঞরাই নয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো নির্দেশনা নেই। তাই সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান, নিজের প্রতি আস্থা বাড়ান, লোভের মাত্রা কমান। নিশ্চিত বলা যায়, সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close