reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ নভেম্বর, ২০২১

ভয়ংকর ‘মাইন্ড কন্ট্রোল ড্রাগ’ ছিনতাইয়ের নতুন কৌশল

মুহূর্ত বদলের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। বদলে যাচ্ছে মন ও মেজাজ। একই সঙ্গে বদলাচ্ছে চরিত্র। বিশেষ করে মানবকুলের। চরিত্র বদলে যদি ইতিবাচক দিকে যায়, তাহলে তা প্রশংসার দাবি রাখে। যদি বিপরীতে যায়! সেখানে প্রশংসা করার কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে অনৈতিক সব কাজে কৌশল বদলের এক প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়। আর এ ক্ষেত্রে সফলতাই বেশি। দুর্ভাগ্য আমাদের। একে প্রতিহত করার যেন কেউ নেই। থাকলেও তারা নেই রাজ্যের বাসিন্দা। আর রাজ্যের বসিন্দা নেই বলেই সমাজে অরাজগতার প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো।

এখন আর ছিনতাইয়ে চাকু-ছুরি-পিস্তলের প্রয়োজন পড়ছে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলও বদলেছে। তবে বাহ্যিকভাবে ছিনতাইকালে যে ভয়ংকর পরিবেশের জন্ম দিত, এখন আর সে রকম হয় না। এখন এর বিপরীত। একটি ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক। সনিয়া আক্তার মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় পেছন থেকে এক নারীকণ্ঠের ডাকে পেছন ফিরে তাকাতেই এক লোক তার মুখের সামনে একটি কাপড়ের রুমাল উড়ালেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক নারী তার হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দেন। এর মধ্যে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন সনিয়া আক্তার। চক্রের সদস্যদের কথামতো তিনি স্বর্ণের বালা, গলার চেইন, কানের দুল ও মোবাইল ফোন দিয়ে দেন। নতুন কৌশলে দুর্বৃত্তরা ব্যবহার করেছেন যে ভয়ংকর ড্রাগ তার নাম ‘মাইন্ড কন্ট্রোল ড্রাগ’। এ ড্রাগ ব্যবহার করে যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো মানুষের চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যেখানে ভয় ও কষ্টের পরিমাণ নেমে আসবে অনেক নিচে।

এটি ছিনতাইয়ের নবতর এক অধুনা কৌশল। এখানে অজ্ঞান পার্টির প্রয়োজন হয় না, মলম পার্টির ভূমিকাও ব্যাকডেটেড। এ যেন নবযুগের নবকৌশল। এজন্য প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে। ছিনতাইকারীদের কৌশল বাছাইয়ের প্রশংসাও করতে হয়। কিন্তু দেশের মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যদের জন্য কোনো বাহবা দেওয়া গেল না। দুর্বৃত্তরা তাদের প্রফেশনাল দায়িত্ব পালন করতে পারলেও দেশের নিরাপত্তারক্ষীরা তা পারেননি। চোখের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে যে অরাজগতা চলছে তা সরাতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন।

‘মাইল্ড কন্ট্রোল ড্রাগ’ এটি ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা শয়তানের শ্বাস বা স্কোপোলামিন হিসেবেও পরিচিত। প্রতারকচক্র বা দুর্বৃত্তরা এই ড্রাগ ব্যবহার করে মানুষের মানসিক অবস্থা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তাদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলাই তখন ভুক্তভোগীদের অবলম্বন হয়ে পড়ে। মানসিকভাবে তাদের অনুসরণ করা ছাড়া ভুক্তভোগীদের আর কোনো পথ খোলা থাকে না। নিজস্ব বোধ হারিয়ে সে বা তিনি মুহূর্তে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি হয়ে যান।

মাদক বিশেষজ্ঞদের মতে, স্কোপোলামিন মানবদেহের জন্য ভয়ংকর বিষয়। নাসা তাদের অ্যাস্ট্রনাটদের ওপর ০.৩৩ সিলিগ্রাম ব্যবহার করেন তাদের মোশন সিকনেস কাটানোর জন্য। আর যেকোনো সাধারণ মানুষের ওপর যদি ৫-৭ মিলি ব্যবহার করা হয় তবে সে হয়ে যাবে হেল্পলেস। তাকে দিয়ে যা ইচ্ছা তা-ই করানো যাবে। আর ১০ মিলি ব্যবহার করা হলে কোমায় যাওয়াসহ মৃত্যুও হতে পারে।

সুতরাং সামাজিকভাবে আমাদের চলনে-বলনে যার যার নিরাপত্তা তাকেই নিতে হবে। বিশেষ করে চলনে-বলনে ডিজিটাল থেকে বেরিয়ে অ্যানালগে ফিরে আসতে পারলে দেখা দিতে পারে শুভলক্ষণ। নিরাপত্তারক্ষাকারীদের ওপর ভরসা এবং অপেক্ষা করলেই বিপদ দরজায় এসে দাঁড়াতে পারে। আশঙ্কাটি ব্যক্তির নয়, বাস্তবতার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close