reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

অবক্ষয়ের কত নিচে আমাদের বসবাস

সামাজিক অবক্ষয় নামতে নামতে কতটা নিচে অবস্থান করছে, তার কোনো পরিসংখ্যান বা জরিপের ফলাফল আমাদের হাতে জমা নেই। তবে আন্দাজ করা যায়। সম্ভবত অবক্ষয় এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাসের চালক ও হেলপার কলেজপড়ুয়া ছাত্রীকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দেয় কীভাবে! মনে হয়, আমজনতার মানবিক বোধের ওপর মরিচা পড়ে তা ভোঁতা হয়ে গেছে। যে মরিচার পুরুত্ব গণ্ডারের চামড়ার চেয়েও মোটা। তাই তাদের এই বোধকে মৃত বলেই ধরে নেওয়া যায়। সাধারণ মানুষের চরিত্র তো কচুরিপানার মতো। স্রোতের অনুকূলে চলাই স্বভাব। কিন্তু যারা কচুরিপানা নন! তারা কোথায়? তারা কি সমাজ ত্যাগ করে বনবাসী হয়েছেন! তথ্য বলছে, তাদের কেউই বনবাসী হননি। সমাজের অভ্যন্তরেই বসবাস করছেন এবং বহাল তবিয়তেই। সমাজের ক্ষয়-অবক্ষয়ে তাদের কিছুই যায়-আসে না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য টাকা অথবা সম্পদ। নৈতিকতা-অনৈতিকতার ধার তারা ধারেন না। এটিই তাদের চরিত্র। পুঁজির চরিত্রের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে নিজেদের চরিত্র গড়ে তুলেছেন। কথায় আছে পুঁজির চরিত্রের ওপর নির্ভর করেই গড়ে ওঠে সমাজে বসবাসরত মানুষের চরিত্র। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।

পুঁজির চরিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমাদের পুঁজি নির্মিত হয়েছে অনৈতিক প্রবাহে। যেখানে লুটের প্রাধান্যই বেশি, সেখানে চরিত্রও লুটেরা চরিত্রের অনুকূলে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ চরিত্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সমাজের এতসব অসংগতি। অসংগতি এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, প্রকাশ্যে বাসের অভ্যন্তরে কলেজপড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেকে বলছেন, বিচারহীনতা আমাদের এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। অবশ্য এরই মধ্যে চালক এবং হেলপারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে রিমান্ড চেয়েছে। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ ঘটনার শেষ কোথায়! বাস্তবতা বলছে, সময়ের স্রোতে তা ডিপফ্রিজে গিয়ে আশ্রয় নেবে।

আশ্রয় নেওয়ার অন্যতম কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অনৈতিক বা লুটেরা পুঁজির শক্তির কাছে সমাজ আজ পরাজিত। এদের হাত অনেক লম্বা। এরা সব সময় আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রমাণস্বরূপ বলা যায়, সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ধর্ষণ মামলার এক আসামিকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় আপিল বিভাগে ক্ষমা চাইলেন বিতর্কিত সেই বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে আদালতের কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায়ের পর যিনি বিচারিক ক্ষমতা হারান।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার সাবেক প্রোগ্রাম প্রডিউসার আসলাম শিকদারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর মামলা করা হয়। ওইদিনই আসামি আসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট তাকে জামিন দেয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আসলামের জামিন স্থগিত করে। চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিত থাকার পরও গত বছরের ২ মার্চ আসামি আসলামকে জামিন দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক কামরুন্নাহার। এরপর ১২ মার্চ কামরুন্নাহারকে তলব করে আপিল বিভাগ।

আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষ সমাজকে কলুষিত করার ক্ষমতা রাখে না। অসাধারণের হাতেই তা কুক্ষিগত। এদের হাত থেকে সমাজকে কলুষমুক্ত করতে আদালতের শতভাগ সহযোগিতা চাই। সম্ভবত এর বাইরে আপাতত কোনো পথ খোলা নেই। আমরা আশা করতেই পারি, আদালত এসব নৈতিকতা-বিবর্জিত মানুষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close