reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ নভেম্বর, ২০২১

শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হোক

দেশে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রায় উঠেই গেছে। কমবেশি যাই হোক, একপ্রকার অর্থের বিনিময়ে মানুষকে তা গ্রহণ করতে হচ্ছে। বাস্তবতা এই, সাধারণ মানুষের সরকারি হাসপাতাল ছাড়া সেবাপ্রাপ্তির স্থান খুবই কম। কিন্তু দেশের চিকিৎসা খাতের অবস্থা এমন যে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরও প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হয় বাইরে থেকে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও তা পায় মাত্র ৩ শতাংশ রোগী। আর ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। অধিকাংশ রোগীকে বেসরকারি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হয় আর সেবা নিতে হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। এতে রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় বাড়ে অসম্ভব রকমের। ফলে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়ে সর্বস্বান্ত হন রোগীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সরকারি অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে এর সমাধান সম্ভব নয়, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা।

অস্বীকার করা যাবে না, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি হাসপাতাল অপ্রতুল। তার পরও আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের সামর্থ্য অনুযায়ী যে সেবা দেওয়ার কথা বা সরকারিভাবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দায়িত্ব-কর্তব্যরতরা সঠিকভাবে দিচ্ছেন না বা দেওয়ার চেষ্টা করেন না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বাজেট কম। একই সঙ্গে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জনপ্রতি স্বাস্থ্য খাতে খরচ সবচেয়ে কম, মাত্র ৪৫ ডলার। গত রবিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ২০১২ সালে বাংলাদেশে রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় ছিল ৬৪ শতাংশ। ২০৩২ সালের মধ্যে এই ব্যয় ৩২ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশল : ২০১২-৩২ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে এই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ শতাংশ। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘নিজ পকেট থেকে গৃহস্থালি ব্যয় সংকোচনের কৌশল’ শীর্ষক টেকনিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করেছে। সে রিপোর্টের অবহিতকরণ কর্মশালায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। ভুলে গেলে চলবে না, চিকিৎসা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার।

আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা গণমানুষের এ অধিকার পূরণে প্রথম থেকেই তুলনামূলকভাবে ভূমিকা রেখেছে। দেশের চিকিৎসা খাতে জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় জাতীয় বাজেটে। তার পরও দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে চিকিৎসা খাত কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে, তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ব্যর্থতার কারণে দেশের শতকরা ৬৮ ভাগ লোক বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। এ সুযোগে মালিকরা চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাচারিতা। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের স্বাস্থ্যসেবা করার নামেই সরকারের অনুমোদন নেয়। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা চিকিৎসাসামগ্রী, ওষুধ আমদানিতে সরকারি ভর্তুকিও পেয়ে থাকে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আমরা চাই দ্রুত এ অব্যবস্থার অবসান হোক। নিশ্চিত হোক শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close