reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ নভেম্বর, ২০২১

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা কত দূরে পাঞ্জেরি

মানুষের ক্রয়ক্ষমতাই মূল কথা। এই ক্ষমতার ওপর নির্ভর করেই শান্তির ব্যারোমিটারে ওঠানামা। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা থাকবে কী থাকবে না তারও অনেকটাই নির্ভর করে এই ক্রয়ক্ষমতার ওপর। প্রতিনিয়তই এই ক্ষমতা কমছে। বাড়ছে মানুষের দুর্দশা। এবার ঘটল আরো ব্যতিক্রমী ঘটনা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রায়ই মূল্যবৃদ্ধি এ দেশে কোনো নতুন ঘটনা নয়। আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। ব্যতিক্রম এটুকুই, এত বেশি মূল্যবৃদ্ধি স্মরণকালের ইতিহাসে আর নেই। আর এমন একটি পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো হলো, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ছোঁয়ায় মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সর্বত্র। তবে সর্বপ্রথম আমরা গণপরিবহনে এর বহিঃপ্রকাশ হতে দেখলাম।

শৃঙ্খলা আসছে না কিছুতেই। সড়কজুড়ে এখনো বিশৃঙ্খলার চিত্র। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য মতে, ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাসেই চলছে নৈরাজ্য। থেমে নেই ভাড়া নিয়ে বাস-কন্ডাক্টর ও যাত্রীদের বাগবিত-া। ক্ষেত্রবিশেষ হাতাহাতি ও মারামারি পর্যন্ত। সরকারের বেঁধে দওয়া ভাড়ায় মান্যতা নেই। ইচ্ছামতো ভাড়া তোলা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। এ ছাড়া রয়েছে অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, চলছে ওভারটেকের প্রতিযোগিতা, সড়কে গণপরিবহনের আইন মানার নেই কোনো লক্ষণ। নিজেদের তৈরি আইনে যেন তাদের চলাচল। ফলে দেশকে দিতে হচ্ছে বিরাট মূল্য। এক দিকে প্রাণহানি পাশাপাশি রক্তাক্ত শ্রম ঘণ্টা।

বিশ্বব্যাংকের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন ৩২ লাখ শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এক দিকে শ্রম ঘণ্টার জটিলতা পাশাপাশি ক্রয় ক্ষমতার অবনমন, দুটোর যোগফলে শান্তি ও শৃঙ্খলা হনুজ দুরস্ত বলে মনে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। কিন্তু কেন? এমন তো কথা ছিল না। কথা না থাকলেও এমনটাই হচ্ছে। কবি সুনীল গাঙ্গুলীর কাব্য ভাষায় বলতে হয়, ৩৩ বছর কেটে গেছে, কেউ কথা রাখেনি। কবির পেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। আমাদের সঙ্গে অভিন্ন নয়। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় আমাদের বলতে হচ্ছে ৫০ বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখেনি।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, রাজধানীতে চলা বাস-মিনিবাসের ৮৭ শতাংশ নৈরাজ্যের শামিল। সারা দেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের। বাকিরা অদক্ষ এবং লাইসেন্সবিহীন অথবা যে লাইসেন্স বহন করে তা জাল। আবার এদের সড়ক আইন বা ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩১ লাখ। এদিকে বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ স্বীকার করেছেন, রাজধানীতে যেসব চালক গাড়ি চালান তার বেশির ভাগই অদক্ষ। পাশাপাশি যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেছেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন এবং বাস মালিক সংগঠনের। তার মতে, এদের কারো তেমন কোনো এনফোর্সমেন্টের ব্যবস্থা নেই।

নেই নেই আর নেই। বিগত ৫০ বছর ধরে আমরা এই একই শব্দের প্রতিধ্বনি শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা বলছে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। আমরা উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছি, রপ্তানিতে ঈর্ষান্বিত উল্লম্ফন আমাদের আশান্বিত করেছে, রেমিট্যান্স আয় আমাদের সাহস বাড়িয়েছে এবং রিজার্ভ এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ। এরপরও যদি শান্তি এবং শৃঙ্খলা ফিরে না আসার কারণটা কী। অনেকে বলেন অর্থনৈতিক বৈষম্য। আমরা বলছি ক্রয় ক্ষমতার অবনমন। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই মুক্তি। আমরা সে দিনের অপেক্ষায় থাকলাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close