reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ অক্টোবর, ২০২১

চাঁদাবাজের নিঃশ্বাসে জ্বলছে ফুটপাত

চাঁদা বলতে ভয় ও অপকৌশলের মধ্য দিয়ে বলপ্রয়োগে টাকা সংগ্রহকেই বুঝি। আর যারা এ কর্মটি করে তাদের চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সমাজ। প্রতিদিন দেশে কত টাকা চাঁদাবাজি হয় তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমিতে যে চাঁদাবাজি হচ্ছে-তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বিষয়টি কমবেশি সবারই জানা। সবার চেয়ে ভালো জানেন তারা যারা প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে পুড়ে অঙ্গার হচ্ছেন। কারা এই চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত, সে বিষয়টিও অজানা নয়। মোটা দাগে বলা যায়, পুলিশ প্রশাসনের কিছু সদস্য এবং রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় লালিত কিছু ব্যক্তি এই অনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। আর সে কারণেই দেশকে চাঁদাবাজমুক্ত করে গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে ১৫টি মার্কেটের সামনে ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র। তথ্য মতে, চক্রের পেছনে রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করলেও প্রশাসনের নেই কোনো ভূমিকা। হকারদের অভিযোগ, দোকান বসলেই দিতে হয় চাঁদা। প্রতিদিন প্রত্যেক হকারকে দিতে হয় ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। এখানে হকারের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। চাঁদা দিতে না চাইলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা চালানো হয়। ভয়ভীতি দেখানো নৈমিত্তিক ব্যাপার। অনেক সময় পুলিশও এ কাজে অংশগ্রহণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফুটপাতের এসব দোকানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের দায়িত্বও চাঁদাবাজদের। এ বাবদ লাইটপ্রতি হকারদের দিতে হয় ৩০ টাকা।

খোদ রাজধানীর জনবহুল এবং বর্ধিষ্ণু এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে প্রশাসনের সামনে এমন কর্মকা- নির্বিঘেœ কীভাবে চলতে পারে তা আমাদের জানা নেই। বিষয়টি পরিষ্কার করার দায়িত্ব প্রশাসনের। বিশেষ করে উল্লেখ্য যে, বিষয়টি তাদের অজানা নয়। তাদের চোখের সামনেই ঘটছে এমন অনৈতিক কর্ম। কিন্তু কীভাবে! সম্ভবত তারা দেখেও না দেখার ভান করে ঘুমিয়ে থাকে। আর এই জেগে ঘুমানোর পেছনেও নিশ্চয়ই কোনো কার্যকারণ আছে বলে মনে করেন অনেকেই। সম্ভবত এভাবেই চলছে দেশ। আর সে কারণে চাঁদাবাজি এখন দেশের অলিগলিতে। অনেকটা ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে দেহের সর্বত্র।

শুধু প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ টাকাতেই রফা হয় না। নতুন কোনো দোকানি বসতে চাইলে তাকে সেলামি হিসেবে গুনতে হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। চাঁদার টাকা তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। চলে যায় পুলিশ, স্থানীয় নেতা ও চাঁদাবাজদের পকেটে। প্রতি বছর মাসে দেড় কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করা হয়। বছর শেষে যা ১৮ কোটিতে দাঁড়ায়। হকার্স লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করা হয়েছে। পুলিশের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। বরং অনেক জায়গা থেকে নানা রকম হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এটিই বাস্তব চিত্র। যখন রক্ষকই থাকে ভক্ষকের ভূমিকায় তখন এ চিত্র সহজে বদলানোর নয়। একটু হলেও আঙুল বাঁকা করতে হবে। নিতে হবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই পারে এ চিত্র বদলে দিতে-এটাই আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close