reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ অক্টোবর, ২০২১

প্রতারকের বৃত্তে আমরা ভাঙাটাই জরুরি

ইবলিশের আবির্ভাবের মধ্য দিয়েই যেন প্রতারকের আবির্ভাব। তাকেই আমরা প্রতারণার শিক্ষক হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। আবার বস্তুর বিকাশের ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ, ইতি ও নেতিবাচকের দ্বন্দ্বের ভূমিকাই প্রধান। অর্থাৎ সভ্যতা বিকশিত হওয়ার পেছনে এই দ্বন্দ্বের প্রাধান্যই প্রধান। মোটকথা পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই ধনাত্মক আর ঋণাত্মকে যুদ্ধের শুরু। বারবারই ঋণাত্মক পরাজিত হয়েছে বিধায় সভ্যতা আজ এতদূর এগিয়েছে। তবে যেটুকু মানবিক হলে মানুষকে মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, আমরা বোধহয় এখনো সে স্তরে পৌঁছাতে সক্ষম হইনি। হইনি বলেই সমাজে অনৈতিক কাজের প্রতিফলন বেশি। প্রতারকের আধিপত্য। আধিপত্য স্থির থাকেনি। সংক্রমিত হচ্ছে, সংক্রমণ বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে।

লোভ মানুষের সহজাত। সংবরণ মানুষের অর্জন। আর এই সংবরণ মানুষকে মানুষের নিকটবর্তী করে। নতুবা প্রতারক বৃত্তে নিমজ্জিত হতে হয়। ভোগবাদী সমাজব্যবস্থায় লোভ সংবরণ সহজ নয়। আমাদের চারপাশে যেভাবে লোভকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসাটাও রীতিমতো একটা যুদ্ধের মতো। জেতাটা সহজ নয়। যেহেতু ভোগটাও মানুষের সহজাত, স্বাভাবিক কারণেই সে ভোগের দিকে ঝুঁকবেই। আর ভোগবাদী সমাজব্যবস্থা সেই ঝোঁকার প্রশ্নকে আরো বেশি লোভনীয় করে উপস্থাপন করে আকর্ষণ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। লোভে পড়ে মানুষ ঝাঁপ দিচ্ছে লোভের সাগরে।

এখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা অনেকেই বলেন। কিন্তু কার্যত নিজেরাই সেই বৃত্তের বাসিন্দা। কাজটি সহজ নয়, তাই কারো ওপর দোষারোপ না করেই বলা যায়, সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এখান থেকে বেরিয়ে আসাটাই জরুরি। দ্বন্দ্ব যত দিন থাকবে, নেগেটিভ ও পজিটিভের সংঘাত তত দিনই অব্যাহত থাকবে। তবে পজিটিভকে সুসংহত রাখাই হবে মানুষের কাজ। নেগেটিভকে পরিহার করে পজিটিভকে গ্রহণ করাই হবে উত্তম। আমরা শুধু একে অপরের সঙ্গে প্রতারণায় লিপ্ত রয়েছি, তাও নয়। অনেক সময় নিজের সঙ্গে নিজেও প্রতারণায় লিপ্ত হই।

কিন্তু কেন? প্রশ্নের একটিই জবাব। ভোগের প্রশ্নে প্রশ্নাতীত লোভ আমাদের টেনে নামিয়েছে প্রতারকের কাতারে। এই কাতার যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে, সভ্যতার মেরুদ-ে ততই ভাঁজ পড়ছে। দুর্বল হতে হতে একসময় ভেঙে পড়বে এই মেরুদ-ের সব অহংকার। সম্ভবত সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরের ভাঁজে ভাঁজে প্রতারকের অবস্থান। বিশেষ করে সমাজ নামের গাড়িটার ইঞ্জিন। অর্থাৎ সমাজ নামের রেলগাড়িটার ইঞ্জিন প্রতারক আক্রান্ত হলে পুরো গাড়িটাই প্রতারণার বৃত্তে আটকে পড়া এক প্রতারণা শিল্প।

দেশের কোনো খাতের দিকে তাকিয়ে বলার উপায় নেই, ‘প্রতারকবিহীন বা সীমিত প্রতারক’। যেদিকেই তাকানো যাক না কেন, অনৈতিক কর্মকা-ে জমজমাট জলসা। প্রতিটি খাতকেই এক একটি কারখানা হিসেবে ধরা যেতে পারে। অনৈতিক কর্মকা-ের প্রশ্নে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিশেষ সুনাম রয়েছে। এই কারখানা থেকে যে পণ্য বেরিয়ে আসবে তার গুণগতমান সম্পর্কে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন নেই। আমাদের শিক্ষা খাত থেকে বেরিয়ে আসা সে রকম একটি উপমা সম্প্রতি সামনে এসেছে। ডেন্টালে ভর্তি করে দেওয়ার টোপ ফেলে টাকা হাতিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। সে ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। দুই বছর ধরে ছাত্রটি এ কাজ করে আসছে। এখানে শুধু একটি পক্ষকেই দায়ী করা যাবে না। ভর্তি পরীক্ষায় জড়িতরাও প্রতারণার বাই থাকতে পারেন না। প্রতারক আছে। আরো আছেন যিনি প্রতারিত হয়েছেন। প্রতারিত ব্যক্তিটিও লোভের বশবর্তী হয়ে অনৈতিক কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তবু আমরা এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞরা বলছেন, ‘নৈতিকতার উন্নয়নই একমাত্র পথ’।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close