মো. জহুরুল ইসলাম তরফদার

  ২৪ অক্টোবর, ২০২১

মুক্তমত

চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির যৌক্তিকতা

বিশ্বায়নের এই সময়ে বাংলাদেশের অবস্থা দ্রুত পাল্টাতে সঙ্গে সঙ্গে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের জন্য ছাত্র-শিক্ষার্থীরা জোরালো দাবি করতে থাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। গ্র্যাজুয়েট হয়ে বের হচ্ছে কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না থাকায় এরই মধ্যে এক বছর ছয় মাস মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চাকরির আবেদন না করতে পারায় বেকার জীবনের দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে। এ ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আবেদন নিবেদন ও চাকরির যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর চার থেকে পাঁচ বছর পেরিয়ে ৩২ থেকে ৩৩ বছর উত্তীর্ণ হয়ে যায়। (কোভিড-১৯) করোনাভাইরাসের কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বিভিন্ন পরীক্ষা স্থগিতের ফলে সবার জীবন থেকে দেড়টি বছর হারিয়ে গেছে। আবার করোনাভাইরাসের দ্বিতীয়-তৃতীয় ঢেউ শেষ হয়ে এখন আপাতত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। জনগণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকার-রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভের পর চাকরির বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থী সময় স্বল্পতায় চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে না। দুই থেকে তিন বছর প্রস্তুতির সময় পেলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে যায়। দুঃখজনক হলেও মেধাবী শিক্ষার্থীরা দুই থেকে তিনটি চাকরির আবেদন সুযোগ পেয়ে থাকে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর হওয়াতে বঞ্চিত হচ্ছে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী। বর্তমান সরকারের নিরলশ পরিশ্রম ও দূরদর্শিতার কারণে বিভিন্ন সূচকে উন্নতির ফলে মানুষের গড় আয়ুর বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ। উন্নত দেশগুলো তাদের জনগণকে মানবসম্পদে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমারেখা নির্দিষ্ট করেনি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কায় ৪০ বছর ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫ বছর ইতালিতে ৩৫ বছর ফ্রান্সে ৪০ বছর আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ৪০ বছর করেছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, উপজাতীয় প্রার্থীদের ৩২ বছর করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি ও গোত্রের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা বয়সের পার্থক্য কোনোমতেই যুক্তিযুক্ত নয়। এ কারণে শিক্ষিত মেধাবী বেকার যুবকদের প্রত্যাশা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩২ উন্নীত করা খুবই যৌক্তিক। বয়সসীমা বৃদ্ধি করলে প্রত্যাশিত চাকরি প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষিত মেধাবীদের হতাশা দূর হবে। শিক্ষার পরিবেশ সহায়কসহ শিক্ষা কার্যক্রমে মনোনিবেশ বাড়বে। বর্তমান সরকার দেশের জন্য অনেক লক্ষণীয় যুগান্তকারী কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়েছে। যা এখানে বলে লিখে শেষ করা যাবে না। সর্বোপরি বলা যায় চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে দেশের ইতিহাস হয়ে থাকবে এ সরকার।

সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স : বাংলাদেশের শুরুর দিকে চাকরি প্রবেশের বয়স ২৭ বছর আর অবসরের বয়স ৫৭ বছর ছিল। ১৯৯১ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স তিন বছর বাড়িয়ে ৩০ বছরে উন্নীত করে তখন অবসরের বয়স ৫৭ বছর রয়ে যায়। বর্তমানের সদাসয় গণতান্ত্রিক সরকার মাত্র দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ করে যা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হয়নি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী বর্তমান মানুষের গড় আয়ু বেড়ে প্রায় ৭২ দশমিক ৮ বছর হয়েছে। সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় চাকরি হতে অবসরের যাওয়া মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। একটা স্বাধীন দেশে বহুবিধ নিয়ম চালু রাখা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় না, যেমন- মুক্তিযোদ্ধাদের ৬০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬৫ বিচারপতিদের ৬৭ গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানিদের ৬৭ পর্যন্ত আর সাধারণের জন্য ৫৯ বছর। আবার এরই মধ্যে সরকারের আনুগত্য ও কাছের অসংখ্য কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই বৈষম্যও সৃষ্টি করা সমীচীন হয়নি। বিভিন্ন সূচকে দেশ অনেক এগিয়েছে এবং নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। সুস্থ সবল দক্ষ পরীক্ষিত অভিজ্ঞ মানুষের সেবা নেওয়ায় জাতি আরো উপকৃত হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অবসরের বয়স যেমন আমেরিকায় ৬৬ বছর সুইডেনে ৬৫ তাইওয়ানে ৬৬ বছর এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বেশি। শিক্ষিত তরুণ মেধাবীদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং চাকরিজীবী দক্ষ পরীক্ষিত অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা আরো কিছুদিন কাজে লাগানোর চিন্তা থেকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশব্যাপী গুঞ্জন ছিল চাকরিতে প্রবেশের বয়স ও অবসরের বয়স বাড়ানো হচ্ছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনামন্ত্রী ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যেহেতু মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে তাই বয়স পূর্ণবিন্যাসের সময় এসেছে বলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর জোরালো মতামত ব্যক্ত করেন। সবার দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ ও অবসরের বয়স ৬০ করা খুবই যৌক্তিক। এতে করে ভারসাম্য বজায় থাকবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close