reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ অক্টোবর, ২০২১

অনৈতিকতার আগ্রাসন এখনো থামেনি

আন্তর্জাতিক মহলে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে বাংলদেশের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকাও বিশেষভাবে আলোচিত। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে সে তুলনায় অবহেলার মাত্রাটাই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে আমাদের এখনো বোধোদয় হয়নি। আমরা আমাদের ব্যক্তিস্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে পরিবেশ দূষণের মহাযজ্ঞে নাম লিখিয়েছি। লোভ আমাদের সব নান্দনিক বিষয়কে বিসর্জন দিয়ে যে যার মতো ভাগ্য গড়তে তৎপর হয়েছি। এর জন্য কেবল সাধরণ মানুষের মধ্যে থাকা কিছু ব্যক্তিবিশেষই দায়ী নয়, যুক্ত আছেন পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গও। এদের অবহেলা, অলসতা ও অনৈতিক কর্মকান্ড এবং ব্যক্তিলাভের পরিনামই আজকের পরিবেশ দূষণ। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে, এই ব্যক্তিলোভ বা লাভ এক দিন সমষ্টির ওপর যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তা জানা থাকলেও আমাদের যেন হুঁশ ফিরে আসছে না। সম্ভবত মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার পরও মানুষ হতে না পারাটাই অন্যতম কারণ।

আইন বলছে, দেশে প্রথাগতভাবে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে তা অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসনের চোখের সামনেই গড়ে উঠেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ইটভাটা। এলাকায় নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি ইটভাটা। এসব ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও নিবন্ধনহীন ভাটাগুলো উৎপাদনে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। এবারের কথা না হয় বাদই দিলাম। বিগত বছরগুলোতে যে উৎপাদন হয়েছে তা সত্য। অনৈতিক বাণিজ্য যে হয়েছে তাও সত্য। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর অথবা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিকার বা প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এটাই দুঃখজনক এবং আমাদের ব্যর্থতা।

ইটভাটা মালিকরা তাদের পক্ষ থেকে যে যুক্তির অবতারণা করেছেন তা কতটা গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। তবে তা ধোপে টিকবে বলে মনে হয় না। তারা বলেছেন, নিবন্ধন না থাকলেও মূল্য সংযোজন কর, আয়কর এবং ইউপি থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে প্রশাসনের কথা সেই গৎবাঁধা, ‘যেকোনো অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে তারা তৎপর’। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, তাদের এই তৎপরতা শম্বুক গতির চেয়েও ধীর। দীর্ঘ কয়েক বছর ইটভাটার উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও আজ অবধি সেখানে কোনো অবৈধ কর্মের চিত্র তারা খুঁজে পাননি। এক্ষেত্রে বলতে হয়, সম্ভবত যারা ইটভাটা পরিচালনা করছেন তারা বৈধভাবেই তা করেছেন অথবা পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন অনৈতিকতার প্রশ্রয় দিয়েছে। এখানে দুই পক্ষের অবস্থান একত্রে সত্যের ওপর স্থায়ী হতে পারে না। একপক্ষকে নতি স্বীকার করতেই হবে।

লাইসেন্স ছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ। কোনো অবস্থাতেই তা করা যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে কারাদন্ডের বিধানও রয়েছে। এছাড়া ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসটিআইসহ সরকারি কয়েকটি সংস্থার ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় সেই বাধ্যতাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। উপেক্ষা করতে সহায়তা দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন। তাদের এই সহায়তা আইনকে কতটা উপেক্ষা করেছে তা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা মর্মাহত হয়েছি। মর্মাহত হয়েছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে এসে। নতুন করে ৩০ লাখ শহীদের আত্মাকে করা হয়েছে রক্তাক্ত। যা জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কাম্য নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close