সাধন সরকার
স্মরণ
আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস
আজ ২০ অক্টোবর ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’। সাফল্য ও গৌরবের ১৬টি বছর পার করল উচ্চশিক্ষা বিস্তারে সময়ের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে উপমহাদেশের অন্যতম পরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)। দেশের নানা সংগ্রামে এ প্রতিষ্ঠানের অবদানও কম নয়। ১৯৭১ সালে জগন্নাথ কলেজে গণহত্যা চালানো হয়। যুদ্ধ শেষে পাওয়া যায় গণকবর। ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর একরাশ স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটিকে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। পথচলার শুরুতে নানাবিধ সংকট থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি পরিপূর্ণ, আধুনিক ও বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শর্তাবলি আবশ্যক, সে পথেই এগিয়ে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, যুগোপযোগী জ্ঞান বিতরণ, অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন, আধুনিক জ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রদানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৮ হাজার ছাত্রছাত্রী, প্রায় ৬৫০ জন শিক্ষক ও প্রায় ৬৪০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্প-সংস্কৃতি, সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম ও সুকুমার বৃত্তি চর্চার মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এবার আসা যাক শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধার কথায়। যাতায়াত ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যান্টিনও নানা সমস্যায় নিয়মিতভাবে খোলা থাকে না। ক্যান্টিনে খাবারের দাম খুবই চড়া। ফলে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, দেশসেরা অন্যতম এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা আবাসন সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আবাসন সংকটের সমাধানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে পুরোনো হলগুলো নানাভাবে হাতছাড়া হয়েছে অনেক আগেই। প্রশ্ন হলো, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পেলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে কেন? নানা সমস্যা মোকাবিলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে বিভিন্ন ভাড়া বাসায় মেস করে। উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসকে সম্প্রসারণ ও উন্নত করতে ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় প্রায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সমস্যার সমাধান ও নানা সুবিধার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। আশার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত একমাত্র আবাসিক হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে’ ছাত্রীদের আবাসনের ছিট বরাদ্দের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৬ তলা বিশিষ্ট এ হলে প্রায় এক হাজার ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যত দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের সমাধান করা যাবে তত দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে।
নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করে চলেছে। তবে গবেষণা কার্যক্রমে আরো বেশি বরাদ্দ দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মাঠও (ধূপখোলা) খেলার জন্য অনুপযোগী। মাঠটিতে প্রায় সময় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঠটির বেহাল দশা। মাঠটি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মাঠটি নিয়ে মাঝে মধ্যে নানা কথা শোনা যায়। একমাত্র খেলার মাঠটি যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা আরো আধুনিক করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাবর্তনের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন শিক্ষার্থীর বুকে লালিত স্বপ্ন হলো কনভোকেশন সেরিমনি। শিক্ষাজীবন শেষে একজন শিক্ষার্থী গায়ে কালো গাউন, মাথায় সমাবর্তন ক্যাপ (হ্যাট) পরে আচার্যের হাত থেকে সনদ গ্রহণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ স্বপ্ন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় শক্তি জোগায়, উজ্জীবিত করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অশেষ ধন্যবাদ এ কারণে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আকাক্সিক্ষত প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি। প্রতি বছর সম্ভব না হলেও অন্তত দুই-তিন বছর পরপর যাতে সমাবর্তন আয়োজন করা যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। ১৫০ বছরের অধিক সময় ধরে ঐতিহ্য বহন করা এ ক্যাম্পাস উপমহাদেশের গর্ব। ইতিহাস-ঐতিহ্য বজায় রেখে নিত্যনতুন গবেষণা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তবে সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও উচিত সব শিক্ষার্থীর দ্রুত আবাসন সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। আবাসন সমস্যার সমাধান হলে শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের স্বপ্ন যেমন পূরণ হবে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ আরো উন্নত হবে বলে মনে করি।
লেখক : সাবেক ছাত্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সদস্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)
"
