reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে

‘ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা/নিতান্ত সহজ সরল,/সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি/তারি দু-চারটি অশ্রু জল।/নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা,/নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।/অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে/শেষ হয়ে হইল না শেষ।’ ছোটগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ কাব্যকলায় এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু তার এই সংজ্ঞা সাহিত্যের দশদিগন্ত পেরিয়ে আমাদের জীবনেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। প্রতিফলন ঘটেছে অনেক পরিকল্পনায়। যেমন রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন, শেষ হয়ে হইল না শেষ। তেমনিভাবে বলা যায়, আমাদের দেশেও অনেক প্রকল্প শেষ হয়েও হয়নি শেষ। নানা অজুহাতে বারবার মেয়াদ বাড়ে তো কাজ শেষ হয় না। এতে রাষ্ট্রের যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তার গচ্ছা তো জনগণকেই দিতে হয়।

বলা সংগত, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাফল্যের অন্যান্য স্তর দ্রুততম সময়ে অতিক্রম করার সক্ষমতা অর্জনও জরুরি। দুঃখজনক হলো, দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়। লক্ষ করা যায়, কোনো কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে, ব্যয় বাড়ে; কিন্তু তার পরও সময়মতো কাজ শেষ হয় না। এতে প্রকল্প প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও জবাবদিহির বিষয়গুলো বারবার আলোচনায় আসে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গাফিলতি ও উদাসীনতার এধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন না এলে দেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রবল ঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা যে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, কয়েক দফা মেয়াদ বাড়লেও কাজ শেষ হয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছয় প্রকল্পের। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময় প্রায় শেষ হতে চললেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬৬ শতাংশ। বারবার মেয়াদ বেড়েও সর্বশেষ সংশোধিত হয়ে পাঁচ প্রকল্প শেষ হতে এখন বাকি ৮ মাস। সেগুলোর এখনো ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। আর একটি প্রকল্পের কাজ এখনো ৬৬ শতাংশই বাকি। সংস্থাটির এ ছয় প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ থেকে সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৩৪৩ কোটি ২ লাখ টাকা। বাকি ৯২৫ কোটি ১২ লাখ টাকা দিয়েছে ডিএসসিসি। ২০১৬-১৯ সালের মধ্যেই এসব প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও দ্বিতীয় সংশোধিত হয়ে মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুনে। গত ছয় বছরে প্রকল্পের মাত্র ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

সঠিক তদারকির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ বছরের পর বছর ঝুলে থাকতে দেখা যায়। কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে শুধু যে ব্যয় বাড়ে তাই নয়; জনগণ এর সুফল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় জনদুর্ভোগও সৃষ্টি হয়। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে জনগণকে দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়। বস্তুত প্রকল্পবিষয়ক সমগ্র কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাতে কোনো রকম অনিয়ম না ঘটে, এটা নিশ্চিত করা না হলেই তা বাস্তবায়নে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি দূর করা না গেলে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। কাজেই যেকোনো প্রকল্প যথাসময়ে যেন সম্পন্ন হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। পাশাপাশি জবাবদিহির বিষয়টিকেও নিশ্চিত করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close