এস এম মাঈন উদ্দীন

  ১৮ অক্টোবর, ২০২১

মুক্তমত

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণই সময়ের দাবি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবন চরম কষ্টে পার করছে। বাজারে চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, শাকসবজি তথা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। নিম্নআয়ের মানুষ যা আয় করছে, তার পুরোটাই জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য ব্যয় করার মতো অর্থ তাদের হাতে থাকছে না। আয়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। কারণ একটাই, তা হচ্ছে বাজারের ওপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও জোড়ালো ভূমিকায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

প্রায় মাস খানিক ধরে দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগ, পত্রিকায়-পত্রিকায় লেখালেখি, আলোচনা-সমালোচনা চললেও এখন পর্যন্ত বাজারে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাচ্ছে না, বরং অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি দেশে নতুন পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠলেও দাম কমছে না।

শুধু পেঁয়াজ নয়, বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। চাল কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকার মধ্যে, পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০-৩০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজিপ্রতি ১৫০, ডাল, তেল, লবণ, শাকসবজির দাম দিন দিন নিম্নবৃত্ত, মধ্যবৃত্ত ও সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন নিম্নবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত সৎ সরকারি কর্মচারী, কেটে খাওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষ। যে দেশের লোকজনকে মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয় অথচ সেই দেশেই শুরুতে মাছ আর চালের বাজারে লাগে আগুন। মাংস তো নিম্নবিত্ত আর খেটে খাওয়া লোকজন কোনো উপলক্ষ ছাড়া খেতেই পারে না।

বাজারের ওপর সরকারের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ এখনো চোখে পড়ার মতো নয়। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর সহজে কমে না।

ইলিশ মাছ বাঙালিদের একটি প্রিয় খাদ্য। বহু রপ্তানিকারক দেশের চাহিদা মিটাতে গিয়ে বিভিন্ন দেশে ইলিশ রপ্তানি করে। ফলে দেশীয় চাহিদা আর মিটানো সম্ভব হয় না এবং ইলিশের দাম বেশির ভাগ সময় চড়া থাকে। সাধারণ ক্রেতারা পছন্দের এ পণ্যটি ক্রয় করতে পারে না, সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলায় না। এ ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিটি পণ্যের রপ্তানির একটা নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সারা দেশে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের এবং প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে দরিদ্র পরিবারগুলোতে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে তারা এখন হিমশিম খাচ্ছেন। তারা এখন একজনের খাবার দুজনে ভাগ করে খাওয়ার মতো অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছেন।

এমতাবস্থায় বাজারে অধিক পরিমাণ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামাগ্রী আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ করে মনিটরিং সেলের মাধ্যমে বাজারমূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে প্রতিনিয়ত বাজারদর নিয়ন্ত্রণ রেখে দিনমজুর এবং নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে আনা এ সময়ের অন্যতম একটি দাবি। এজন্য সরকার ও প্রশাসনের ইতিবাচক ভূমিকায় এগিয়ে আসাটাই জরুরি।

দিনমজুর, নিম্নবিত্ত ও সাধারণ জনগনের দুর্ভোগ লাঘবে ন্যায্যমূল্যে এসব সামগ্রী শহরে ও গ্রামগঞ্জে পৌঁছে দেওয়া দরকার। এতে করে সাধারণ জনগণের দুঃখ কিছুটা হলে লাঘব হবে। আশা করি সরকার তা করবেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে সবকিছুর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে আনতে সক্ষম হবেন। আর এটাই এখন হতদরিদ্র মানুষের একমাত্র প্রত্যাশা।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close