কাইয়ুম আহমেদ

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মুক্তমত

‘হাসু’র রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার গল্প

গ্রামের পাশ দিয়ে কুল কুল ছন্দে ঢেউ তুলে বয়ে চলেছে নদী। রোদ ছড়ালে বা জোছনা ঝরলে সে নদীর পানি রুপোর মতো ঝিকমিক করে। নদীর পাড়ঘেঁষে কাশবন, ধান-পাট-আখখেত, সারিসারি খেজুর, তাল-নারকেল-আমলকীগাছ, বাঁশগাছের ঝাড়, বুনোলতা-পাতার সবুজ ঘন ঘাসের চিকন লম্বা লম্বা সতেজ ডগা। শালিক-চড়ুই পাখিদের কল-কাকলী, ক্লান্ত দুপুরে ঘুঘুর ডাক। সব মিলিয়ে ভীষণ রকম ভালো লাগার এক টুকরো ছবি যেন। এই ছবির মতো গ্রাম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শরতের সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে জন্ম হয় একটি মেয়ের। আদর করে তার নাম রাখা হয় হাসু। গ্রামের ছায়াঘেরা, মায়াভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শ্যামল-শান্ত পরিবেশে সরল সাধারণ জীবনের মাধুর্যে বড় হয়ে উঠে সে।

হাসুর শৈশবের স্বপ্ন-রঙিন দিন কেটেছে এই গ্রামেরই নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা-পানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায়। শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাক-জ্বলা আঁধার রাতে ঝিঁঝির ডাক শুনে আর শাপলা, শিউলি-বকুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে, ধুলোমাটি মেখে। গ্রামেরই পাঠশালায় শিক্ষা নিয়ে। এই হাসুই হলেন বাংলা ও বাঙালির পরম আত্মীয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবার নিয়ে পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনের ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টো রোডের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি অবস্থায় তার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্ম হয় ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনের ঘৃণ্যতম কালো অধ্যায় রচিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহল। দেশ, জাতি ও রাজনীতি তখন অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। সে অবস্থায় ১৯৮১ সালে দেশ ও জাতির কাণ্ডারী হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পান শেখ হাসিনা। সে সময় অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন শেখ হাসিনা কি পারবেন দলের নেতৃত্ব দিতে? কিন্তু শেখ হাসিনাই দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন উন্নতির শীর্ষ স্থানে।

বলা যায়, শেখ হাসিনা রাজনীতিতে তিন দশকের উজ্জ্বল নক্ষত্র- ‘নীলকণ্ঠ পাখি’, মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। সমুদ্রসম অর্জনে তিনি বাংলা ও বাঙালির আস্থার বাতিঘর।

শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম মানবিক প্রধানমন্ত্রীও। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার গণহত্যা থেকে কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে কক্সবাজারে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন মানবাধিকার সুরক্ষায় তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রথম বৈশিষ্ট্যে হলো দূরদর্শিতা। তিনি বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিপর্যয়মূলক প্রভাব থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে এবং অর্থনীতির গতিপথকে চলমান রাখতে দূরদর্শী পথ বেছে নিয়েছিলেন। লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে এবং অফিস, কলকারখানা এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে এমনকি কোভিডপ্রতিরোধী টিকার বিষয়েও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পেরেছেন সফলভাবেই।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য তার সততা। ৫০ বছরে দেশে বিভিন্ন সরকার ও নেতাদের বেশির ভাগ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও অর্থোপার্জনের জন্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন। তবে শেখ হাসিনা এবং তার নিকটবর্তী পরিবারের সদস্যরা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী। শেখ হাসিনার সততা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ নিতে সাহস জুগিয়েছে। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারিতেও তিনি দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের প্রতি অকৃতিম ভালোবাসা। মহামারিকালীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যথাসম্ভব সহায়তা দিয়েছেন। আসলে শেখ হাসিনা এমনই। তার বড় গুণ তিনি বঙ্গবন্ধুর মতোই দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। তিনি দেশ ও দেশের উন্নয়নের জন্য মৃত্যুকেও পরম প্রাপ্তি বলে মনে করেন। বঙ্গবন্ধুর পর সবচেয়ে সফল রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা। বাবা বঙ্গবন্ধুর মতোই তিনি প্রত্যয়ী, অবিচল ও সাহসী। তার নেতৃত্বেই গড়ে উঠছে ‘আধুনিক’ ও ‘ডিজিটাল’ ‘জ্ঞানভিত্তিক’ বাংলাদেশ।

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। এই শুভদিনে সবার প্রত্যাশা শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু হোন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। তার নেতৃত্বেই কল্যাণ ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চলুক বাধাহীনভাবে। আশা রাখি তার বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উন্নত দেশের নাগরিক হয়ে উঠব আমরা। জয়তু শেখ হাসিনা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close