reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বৈষম্যই পৃথিবীর সেরা অসুখ

পৃথিবীতে অসুখের সংখ্যা কত? চিকিৎসা বিজ্ঞানের আর্কাইভ হয়তো এর একটা উত্তর দিতে পারে। তবে সাধারণ মানুষ তা জানে না। জানার কথাও না। সংখ্যা অনুমান করাও অসম্ভব। কিন্তু যদি বলা হয়, সেরা অসুখ কোনটি? এখানেও সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে বর্তমান প্রজন্ম হয়তো বলে উঠতে পারে কেন পাওয়া যাবে না! কোভিড-১৯-ই সবচেয়ে বড় অসুখের নাম। উত্তরটা আপেক্ষিক অর্থে সত্য। চিরন্তন নয়। চিকিৎসাব্যবস্থা সামনে এলেই কোভিড-১৯ আর সেরার তালিকায় থাকবে না। সাধারণের গোত্রে নাম লেখাবে। তবে বিশ্ব মানচিত্রে একটি অসুখকে সেরা অসুখ হিসেবে গণ্য করা যায়। যে অসুখটি আপেক্ষিক নয়- চিরন্তন। আর সেই

অসুখটির নাম, ‘বৈষম্য’।

এই একটি অসুখের কারণে মানবদেহে ইমিউনিটি আর অ্যান্টিবডির এত বেশি ভারসাম্যহীনতা। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই মানবদেহের মধ্যে অসুখটি স্থায়ীভাবে অনুপ্রবেশ ঘটায়। দিন যত গড়িয়েছে, বৈষম্য আরো ঘনীভূত হয়েছে। আর সভ্যতার দাবিদার এই বিশ্বে তা যেন আজ এক দানবীয় রূপে সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছে। ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানবজীবন। প্রতিনিয়তই আমরা শান্তির কথা বলছি। সুখের সন্ধান করছি। কিন্তু দেহের মধ্যে বৈষম্যের মতো রোগ বহন করে সেই শান্তি বা সুখের সন্ধান যে কতটা বিজ্ঞান-বিপরীত, তা আমাদের অজানা নয়। জানার পরও আমাদের অপচেষ্টার কোনো শেষ নেই। সবটাই যেন লোকদেখানো, মন ভোলানোর গল্পের মতো।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, বর্তমান ‘টিকা-বৈষম্য’ প্রবণতা করোনা মহামারিকে দীর্ঘস্থায়ী করবে। তাই কোভিডমুক্ত বিশ্ব গড়তে আমাদের অবশ্যই সাশ্রয়ী মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সর্বজনীন করতে হবে। অর্থাৎ টিকাও যেন বৈষম্যের বৃত্তে শৃঙ্খলিত হয়ে না পড়ে। বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই গুরুত্ব বহন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা-বৈষম্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ যাবৎ উৎপাদিত টিকার ৮৪ শতাংশ উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষের কাছে পৌঁছেছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো ১ শতাংশেরও কম টিকা পেয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ বৈষম্য দূর করতে হবে। কোটি কোটি মানুষকে টিকার বাইরে রেখে করোনামুক্ত পৃথিবী গড়া সম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রীর মতামতের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলা যায়, অবিলম্বে টিকাপ্রযুক্তি হস্তান্তর টিকার সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরামর্শ হতে পারে। কিন্তু বৈষম্য উৎপাদনকারী কারখানা থেকে ইতিবাচক কোনো ফলাফল আশা করা যায় না। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় ভোগবাদী আচরণ অনুশীলিত হবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই আচরণ যদি সব সীমা অতিক্রম করে, তখন সমাজের কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা বিলীন হয়ে যায়। বর্তমান বাস্তবতা সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এই নেতিবাচক আচরণের বিরুদ্ধে অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য কাউকে না কাউকে দাঁড়াতে হবে। দিতে হবে নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী সে ইতিহাসই গড়লেন। পৃথিবীতে বৈষম্য থাকবে কী থাকবে না তা নিয়ে অনন্তকাল ধরে বিতর্ক হতে পারে। তবে, মানব প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লাগামহীন বৈষম্যের অবসান হতেই হবে। যার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close