reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

অমানবিকতার শেষ কোথায়

মানবিক আর অমানবিক। এ দুয়ের জন্ম মানুষের মস্তিষ্কে। প্রকাশ তার আচরণে। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই এ দুয়ের সম্পর্ক সাপে-নেউলে। অমানবিকের বসবাস সাপের গর্তে আর মানবিকের জন্য রয়েছে গোটা বিশ্ব। সামষ্টিক কল্যাণ এবং নান্দনিক পরিবেশ গড়াই এর লক্ষ্য। বিপরীতে চলাচল অমানবিকের। বস্তুর এই দ্বান্দ্বিকতার মধ্য দিয়েই চলছে পৃথিবী। তবে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে- আমরা কোনদিকে যাব! যাওয়ার প্রশ্নে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের ওপরই সমাজ নির্ভরশীল। সমাজ ভালো-মন্দের মিশ্রণে সহাবস্থানের মধ্যেই নিজেকে পরিচালিত করছে। পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন একটি অনুঘটক। দেশে আইনের শাসন থাকলে মানবিকতা বিকশিত হবে, না থাকলে অমানবিকতা সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো কাঁধে চেপে বসবে।

অর্থনীতিই সমাজের মূল চালিকাশক্তি। আর দেশে দেশে এই চালিকাশক্তির একটি নিজস্ব চরিত্র আছে। সেই চরিত্রের ওপর নির্ভর করে সামাজিক চরিত্রের জন্ম। পুঁজির চরিত্র যদি লুটেরা হয়, সমাজে পপির চাষাবাদ বেড়ে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। পাপাচারে কলুষিত হবে সমাজ- এটাও অস্বাভাবিক নয়। সম্ভবত আমাদের দেশীয় পুঁজির চরিত্র সে পথেই এগিয়েছে। জাতীয় পুঁজির চরিত্রে রূপান্তর ঘটাতে পারিনি। পারিনি বলেই ভোগবাদী চিন্তাচেতনার এক মহোৎসব চলছে এই পাললিক ভূমিতে। ভোগবাদী চিন্তা সব সময়ই আত্মকেন্দ্রিক এবং মানবিকতার অন্তরায়। যার প্রতিফলন আজ সমাজের প্রতিটি স্তরে।

সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুবাড়ী গ্রামের বৃদ্ধ নগেন চন্দ্র বর্মণ ও তার স্ত্রীর শেষ আশ্রয় এখন গোয়ালঘর। তাদের বয়স এখন যথাক্রমে ৭০-৬০ বছর। বয়সের ভারে তেমন একটা কাজ করতে পারেন না এই দম্পতি। একসময় নিজেদের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে অনেক কষ্টে চার ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। তাদের ইচ্ছা ছিল সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। সন্তানরা মানুষের বদলে অমানুষের দলে নাম লিখিয়েছেন। তারা কেউ আর বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগান দিতেও কেউ রাজি নন। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে রাস্তায় বের করে দিয়ে এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্তের অবতারণা করেছেন কনিষ্ঠ সন্তান। দম্পতির ১৪ বিঘা জমি ছিল। ছিল বড় দুটি পুকুর। এখন নেই। ছোট ছেলের নামে তা রেজিস্ট্রি করে হস্তান্তর করেছেন। সন্তানদের অমানবিক বোধের কাছে আজ পরাজিত মানবসভ্যতা। স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েও বৃদ্ধ দম্পতি কোনো সুরাহা পাননি। সম্ভবত চেয়ারম্যানও অমানবিক গোত্রের একজন। অবশ্য এলাকাবাসীর অনেকেই বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রশাসন কী করে, তা এখন দেখার বিষয়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের আইন বৃদ্ধ পিতা-মাতার পক্ষে। আইনানুযায়ী ভরণপোষণের দায়িত্ব সন্তানদের নিতেই

হবে এবং বৃদ্ধ দম্পতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close