reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করুন

‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ উপমা হিসেবে যদি এই চিরন্তন প্রবাদটিকে ব্যবহার করি, তাহলেও এই পৈশাচিকতার সঠিক নিরূপণ হবে না। এ যে কী ভয়াবহ ও নির্মম, তা শুধু ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। একজন অসুস্থ মানুষ, সে যে রোগেই আক্রান্ত হোন না কেন, তিনি ওষুধ সেবন করেন আরোগ্য লাভের জন্য। কিন্তু সেই ওষুধ সেবনে আরোগ্য হবে কি, বরং নকল ও ভেজাল ওষুধ সেবন করে অসুস্থ হওয়ারই কথা। যারা এই ওষুধ তৈরি করছেন এবং যারা বিপণন করে অবৈধ ফায়দা লুটছেন, তাদের প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত, মানুষের এই মৃত্যু কেবলই মৃত্যু নয়, তা নিঃসন্দেহে গণহত্যার শামিল।

করোনা মহামারির এই দিনগুলোয় এমনিতেই মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তার ওপর নকল ও ভেজাল ওষুধ মানুষকে আরো এক ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাড়ামহল্লার ফার্মেসি থেকে শুরু করে নামকরা ফার্মেসিতেও নকল ও ভেজাল ওষুধের রমরমা ব্যবসা চলছে। শুধু নকল ওষুধই নয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে নকল ওষুধ শনাক্ত করা সম্ভব নয়। প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসিতে গেলে যে ওষুধ দেওয়া হয়, তাই তারা নিয়ে আসে। এসব নকল ওষুধ সেবনে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে মানুষ আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে। বেশ কয়েক বছর আগে নকল প্যারাসিটামল সেবন করে পাঁচ শতাধিক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এদিকে ওষুধশিল্পে আমাদের দেশ বিশ্বে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বের দেশসহ ১২০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়। কিন্তু নকল ও ভেজাল ওষুধের উৎপাদন এবং বিপণন বেড়ে যাওয়ায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া বহির্বিশ্বে পড়ছে। এতে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এই অপসংস্কৃতি থেকে যেভাবেই হোক দেশের ওষুধশিল্পকে রক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অনেক ভেজালকারী ও বিক্রেতা ধরা পড়েছে। তার পরও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গত শনিবার রাজধানীর মিটফোর্ডে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণে নকল ওষুধ ও তৈরির সরঞ্জামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা নকল ওষুধের মধ্যে রয়েছে আইপিল, নেপ্রোক্সিন প্লাস ৫০০+২০০ এমজি, বেটনোভেট-সি, প্রোটভিট-২০সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ। ডিএমপির লালবাগ গোয়েন্দা পুলিশ এই অভিযান চালায়।

বলা সংগত, নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না। এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তাদের রুখতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে। ওষুধের পাইকারি বাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালাতে হবে। যেসব কারখানায় নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদিত হয়; সেসব কারখানার মালিককে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close