reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

যুক্তরাজ্যে প্রবেশে বৈষম্য কাম্য নয়

আমাদের বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যুক্তরাজ্যের অবস্থান প্রথম সারির কয়েকটি দেশের একটি। যদিও বিশ্বের বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের অবস্থা অনেকটা নাজুক। এদিক থেকে তুলনামূলক বিচারে যুক্তরাজ্যের অবস্থান বেশ শক্ত। এখানকার নাগরিক বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশের তুলনায় অনেক বেশি গণতান্ত্রিক সুবিধা ভোগ করে থাকেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও অপরিসীম এবং ক্ষমতাও অনেক। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের দায়িত্ব বহুলাংশে সরকারের। বৈদেশিক নীতিতে কখনো কঠোর কখনো নরম। তবে দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে নয়। দেশের বেশির ভাগ নাগরিকই বর্ণবাদবিরোধী ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী।

এ রকম একটি দেশ যখন বলে, যুক্তরাজ্যে প্রবেশে বাংলাদেশিদের জন্য রেড অ্যালার্ট দেওয়া হয়েছে। অপরাধ! বাংলাদেশের মানুষ টিকা কম দেওয়ার কারণে ব্রিটিশ সরকারের এই রেড অ্যালার্ট। তথ্য বলছে, বাংলাদেশের চেয়ে বিশ্বে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের অবস্থা আমাদের থেকেও খারাপ। তাদের ওপর রেড অ্যালার্ট আরোপ করা হয়নি। এটি গণতন্ত্রে দ্বিমুখী আচরণ। যা গণতন্ত্রের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি বৈষম্যমূলক এবং পলিটিক্যাল। প্রশ্ন হচ্ছে, এত দেশ থাকতে যুক্তরাজ্য সরকারকে বেছে নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু কেন! এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর পাওয়া খুবই কঠিন। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনীতি যে কিছুটা হলেও ব্যর্থ হয়েছে তা অস্বীকারের উপায় নেই। আমরা মনে করি, সমস্যাটি দুই পক্ষের আলাপচারিতার মধ্যেই শেষ হবে। এ ব্যাপারে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস সম্পর্কে কোনো সুবাতাস আমরা এখনো পাইনি। যা পেয়েছি তা সুখকর নয়। যেমন- রেড অ্যালার্ট প্রসঙ্গ। যদি সুখকর হতো তাহলে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে বাংলাদেশিদের জন্য রেড অ্যালার্টের ঘোষণা আসত না। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস অ্যালার্ট না থাকার কারণেই আমরা পেয়েছি রেড অ্যালার্ট। বিশ্ববাসী খুব ভালো করেই জানে করোনা সংক্রমণ রোধে আমরা কতটা সফল। তুলনামূলক বিচারে সংক্রমণ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশে এখানে মৃত্যুর হার কতটা কম। প্রাকৃতিক কারণেই দেশের মুরগি বিদেশি যেকোনো মুরগির চেয়ে অনেক শক্তিশালী। এদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক। একইভাবে এখানকার মানুষের গঠনও একই প্রক্রিয়ায় এবং একই ডাইসে নির্মিত। আমাদের ওপর রেড অ্যালার্ট জারি না করে গঠন প্রণালির ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা করে দেখা যেতে পারে। তাতে ব্রিটিশ জনগণের আরো বেশি সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সংযোজন ঘটাতে পারত। কিন্তু তা ঘটেনি।

আমরা মনে করি, ব্রিটিশ সরকার এই রেড অ্যালার্টের মধ্যদিয়ে যুক্তরাজ্যের এত দিনের সঞ্চিত গণতান্ত্রিক ভাবধারাকে ক্ষুণ্ন করেছে। বিশেষ করে দ্বিমুখী আচরণের মধ্যদিয়ে। বাংলাদেশ আর যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক এক-দুই দিনের নয়। যুগ যুগ ধরে আসা এ সম্পর্ক গড়তে এবং আজকের এ পর্যায়ে আনতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন দেশটির সমর্থন আমরা আজও গভীর শ্রদ্ধাভরেই স্মরণ করি। তাদের সেই সমর্থন প্রকৃত অর্থেই আজও একটি গণতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই গণ্য করা হয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, যুক্তরাজ্যের সেই গণতান্তিক ধারা অব্যাহত থাকবে। এ দেশের মানুষ আর কোনো রেড অ্যালার্টের আওতায় থাকবে না- এটাই গণমানুষের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close