মৌমিতা চক্রবর্তী

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

অনুশীলন

ফেক আইডির বিড়ম্বনা এড়াতে

গ্রাম থেকে শহর সবার হাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক। ফেসবুক চালায় না এমন মানুষ বর্তমানে খুবই কম। কিন্তু ফেসবুকে মানুষ নানা রকম বিড়ম্বনায় পড়ছে। সবকিছুকে ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ফেক আইডির বিড়ম্বনা। এমন ফেসবুক বিড়ম্বনা এখন অহরহ ঘটছে। মূলত নিজেদের ভুল আর অসচেতনতার কারণে আমরা সমস্যা ডেকে আনি। অচেনা কাউকে ফ্রেন্ড বানানো, নিজের পার্সোনাল তথ্য অপরিচিত ব্যক্তির কাছে আদান-প্রদান করা, বিভিন্ন রকমের লিংকে ক্লিক করে ফেলা, আইডি লগইন করে পাসওয়ার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করা। এভাবেই ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়ে যায় এবং প্রতারণার শিকার হয় মানুষ।

ইদানীং যে জিনিসটা বাজেভাবে প্রতারণা করছে তা হলো ফেক আইডি। ফেক আইডি সেগুলোকেই বলা হয় যেগুলোতে ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, পরিচয়, লিঙ্গ, জন্ম, ব্যক্তিগত তথ্য, অবস্থান, কর্মক্ষেত্র, ছবি, পড়াশোনার স্থানসহ ব্যক্তিগত বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া থাকে। আইডির মালিক পুরুষ নাকি মহিলা বোঝার কোনো উপায় থাকে না। কারণ যে কেউ যেকোনো সময় ফেক আইডি খুলতে পারে। মানুষের নাম ব্যতীত বিভিন্ন নাম দিয়ে যেমন মিষ্টি মেয়ে, এনজেল, বোকা মানুষ, দুষ্টু ছেলের মিষ্টি বউ, নীল পরি, লাল পরি, হালকা বাতাসে লুঙ্গি আকাশে, সুখের পাখি, মেঘ বালক, পাখির পালক ইত্যাদি নামে ফেসবুক আইডি খোলা থাকে। এমনকি মানুষের নামেও আইডি খোলা হয়। তবে সেটি থাকে একদম ভুয়া। কিন্তু বোঝার কোনো উপায় নেই সেটা ফেক আইডি নাকি রিয়েল আইডি, মহিলা নাকি পুরুষ। এমন ফেক আইডির বিড়ম্বনার শিকার হয়ে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো মান-সম্মান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়।

অনেক সময় না বুঝতে পেরে অনেকেই এসব আইডির রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে ফেলে। অনেকে দেখা যায় একপর্যায়ে ভালোবাসার সম্পর্কে ও জড়িয়ে পড়ে অথবা পরকীয়ার মতো জঘন্যতম কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। এরপরই মানুষ বিভিন্ন ফাঁদে পড়ে। এভাবেই পরিচয়। কথাবার্তার একপর্যায়ে ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদান। শেষ পরিণতি হয় ব্ল্যাকমেইল নামক শব্দে। এমনও আছে পরিচয়ের একপর্যায়ে অশ্লীল ছবি ভাইরাল করার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। আর এ সব প্রতারণার মূলে থাকছে আমাদেরই ভূমিকা। শুরুতে সাবধান হলে পরে আর সেই ভোগান্তির সুযোগ থাকে না। ফেক আইডির পাল্লায় পড়ে এমন হাজারো হয়রানির শিকার হচ্ছে মানুষ। এমনও দেখা গেছে অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে ফেক আইডির কবলে পড়ে টাকা পাঠানোর পর ফেক আইডির মালিক তৎক্ষণাৎ সেই আইডি ব্লক করে দিয়েছে। আর প্রেরক হয় প্রতারণার শিকার। প্রতিনিয়ত মানুষ এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তবে সচেতন হলেই ফেক আইডি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট না করা, বিভিন্ন ব্রাউজারে ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন না করা, কোনো লিংক হুট করে না বুঝে ক্লিক না করা। অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারে সচেতন হওয়া। নিজের ব্যক্তিগত সব তথ্য ফেসবুকে শেয়ার না করা। এই মুহূর্তে কোথায় আছি, কী অবস্থায় আছি এসব ফেসবুকে শেয়ার না করাই ভালো। সব সময় নিজের লোকেশন সম্পর্কে ফেসবুকে আপডেট না দেওয়া। ফেক আইডির বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাওয়া যদি আমরা এগুলো থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ফেসবুক পরিচালনা করি।

খুব সহজেই ফেসবুকের ভুয়া আইডি শনাক্ত করা যায়। ভুয়া ফেসবুক চেনার প্রথম উপায় হলো প্রোফাইল পিকচার খেয়াল করা। বেশির ভাগ ফেক আইডির প্রোফাইল পিকচারে বিভিন্ন সিনেমার নায়ক, নায়িকা কিংবা পুতুলের ছবি বা ফুল, পাখির ছবি দেওয়া থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই ছবির মান খুবই খারাপ থাকে। খুব বেশি প্রোফাইল ফটোও থাকে না এই ধরনের প্রোফাইলে। হাতেগোনা চার থেকে পাঁচটা ছবির বেশি থাকে না প্রোফাইল পিক অ্যালবামে আর থাকলেও ফুল পাখির ছবি, ব্যাক্তির নিজের ছবির আপডেট থাকে না। প্রোফাইলে ছবির অ্যালবাম থাকে না সাধারণত। একটি আসল প্রোফাইলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছবির অ্যালবাম থাকে যেগুলো ফেক প্রোফাইলের ক্ষেত্রে একদমই থাকে না। অ্যালবাম থাকলেও নিজের ছবির বদলে ফুল, পাখি, প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি দিয়ে অ্যালবাম বানানো থাকে।

আসল ফেসবুক প্রোফাইলে স্বাভাবিকভাবেই স্ট্যাটাস ও ছবিতে বন্ধুদের সঙ্গে প্রচুর ছবি, কমেন্ট থাকে। কিন্তু নকল ফেসবুক প্রোফাইলে কোনো ধরনের ছবি বন্ধুদের সঙ্গে থাকে না। আদান-প্রদান ও কথোপকথন থাকে না। নকল প্রোফাইলের ছবির নিচে কিংবা স্ট্যাটাসে কমেন্ট থাকলেও তা শুধু প্রশংসা বাক্যই থাকে এমনকি নায়িকার ছবি দেওয়া তাতেও কমেন্ট থাকে, পুতুলের ছবি তাতেও কমেন্ট । এ ছাড়া অন্য কোনো বাক্যালাপ করা যায় না ফেক প্রোফাইলে। ফেসবুকের ফেক আইডি কি না সেটা বুঝতে ফ্রেন্ড লিস্ট দেখুন। ফ্রেন্ড লিস্টে যারা থাকবেন তাদের অধিকাংশ মানুষের আইডিও ফেক আইডিই হয়। কারণ একটি ফেক আইডির বন্ধুরাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফেক আইডির হয়ে থাকে। এরপর বেসিক ইনফো বা পরিচয় খেয়াল করুন। ফেক আইডিতে অধিকাংশ সময়েই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির সঠিক তথ্য দেওয়া থাকে না। মাঝে মাঝে এমন সব স্কুল-কলেজের নাম দেওয়া থাকে যেগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই। আবার অনেক সময় অনেক ভালো স্কুল-কলেজের নাম দেওয়া থাকে। তখনই আপনি বুঝতে পারবেন এটা ফেক আইডি। কেবল ফেসবুকেই নয়, সব ক্ষেত্রেই নকল হতে সাবধান হতে পারলে জীবনের বেশির ভাগ ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়। আমরা সে পথেই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। যা হতে পারে নান্দনিক এবং ঝুঁকিমুক্ত।

লেখক : শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close