reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

লাগাম ধরার মানুষ থাকতে হবে

লাগাম শব্দটির উৎসের সন্ধান করলে যা পাওয়া যায়, তাকে স্পিড কন্ট্রোল মেশিন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। সড়ক পথেও এর ব্যবহার চোখে পড়ে। অবশ্য পশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার ব্যাপক। বিশেষ করে ঘোড়ার গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে লাগামের ব্যবহার হতেই হবে। এই শব্দটি এখন রূপক অর্থে ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে। যত্রতত্র আমরা লাগাম টেনে ধরার কথা শুনতে পাই। তবে যারা লাগাম টেনে ধরার দায়িত্বে নিয়োজিত তারা যেন শুনতে শুনতেই ক্লান্ত হয়ে এখন বিশ্রামে। তাই লাগামহীন বাজারে লাগাম টেনে ধরার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে লাগাম কতটা আছে, বলা মুশকিল হলেও লাগামহীন নয়। কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্পূর্ণ স্বাধীন। লাগাম টেনে দর নিম্নমুখী রাখতে না পারলেও ঊর্ধমুখী করতে সহায়ক। এ এক অদ্ভুত চরিত্রের লাগাম। এখানে লাগামের কোনো দোষ নেই। দোষটা অন্যত্র। মানব চরিত্রের সঙ্গে এদের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া না গেলেও ইবলিশ চরিত্রের সঙ্গে মিল পাওয়াটা অনেকটা ডাল-ভাতের মতো। মানুষ আজ আর মানব চরিত্রে নেই, রূপান্তর ঘটেছে। আর সে কারণেই সমাজে বিপথগামী মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।

রাজধানীর বাজারে এমনিতেই সব পণ্যের দাম বাড়তি। ডিম, গুঁড়া দুধ থেকে শুরু করে চিনি, ভোজ্য তেল, আটা ও মুরগির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। তবে বেশি বেড়েছে চিনির দাম। খোলা চিনি কেজিপ্রতি ৭৭ থেকে ৮০ টাকা। বাজারভেদে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৮২ টাকায়। চিনি পণ্য হিসেবে লবণের মতো অতটা জরুরি নয়। ফলে ক্রেতাপক্ষের বাজার বিমুখতায় বিক্রি কমে আসার কারণে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন চিনির দাম নির্ধারণ করে ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা ধার্য করে। অ্যাসেসিয়েশন অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজার দর এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দাম নির্ধারণ করেছে অ্যাসোসিয়েশন। দেশের প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর সময় এরকম চুলচেরা বিশ্লেষণকে সামনে এনে ন্যায্য একটি মূল্য নির্ধারিত হয়। মূলত মূল্য নির্ধারণের লাগাম ধরা থাকে ব্যবসায়ীদের হাতে। ক্রেতা পক্ষের হয়ে কথা বলার কেউ থাকে না। কখনো ছিল না। এ পর্যন্ত যত সরকার এসেছে, সব সরকারকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিতেই দেখা গেছে। বারবার বলীর পাঁঠা হয়েছে সাধারণ মানুষ।

বাজারদর বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে এ দেশে কম কর্মসূচি গৃহীত হয়নি। তবে ফলাফল সব সময় ব্যবসায়ীদের অনুকূলেই থেকেছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে অনেকেই চিহ্নিত করেছেন অসহায় বাজার ব্যবস্থাপনাকে। যে ব্যবস্থাপনার কোনো মেরুদণ্ড নেই। নেই কোনো ইতিবাচক পরিকল্পনা। যেটুকু আছে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণেই তা ব্যস্ত সময় পার করে। ক্রেতা পক্ষের দিকে তাকানোর সময় নেই। আমরা মনে করি, বাজার ব্যবস্থাপনা একটি জটিল ও কষ্টসাধ্য কাজ। এখানে চাহিদা ও জোগানের মধ্যকার সম্পর্ককে একটি ভালোবাসার সম্পর্কে রূপান্তর ঘটাতে না পারলে ব্যবস্থাপনা কখনোই নান্দনিক করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কাজটি সহজে করা যাবে এমনটাও নয়। অসম্ভবও নয়। তবে, সম্ভব করার জন্য প্রয়োজন বোধের উন্নয়ন এবং সততা। যেকোনো উন্নয়নের পেছনে এই দুইয়ের অবস্থান অপরিহার্য। আর এখানেই আমাদের ঘাটতি। সাফল্যের প্রশ্নে ঘাটতি পূরণের কোনো বিকল্প নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close