reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ আগস্ট, ২০২১

উদ্ভূত উটের পিঠে চলেছে বিশ্ব

বিবেচনাবোধ অথবা শক্তির ভারসাম্য হারিয়ে গেলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের কার্যকলাপে এমন কিছু আভাস পাওয়া গেছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক যে প্রস্তাব রেখেছে, তা কূটনৈতিক পর্যায়ে কতটা অশালীন এবং অবমাননাকর তা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা এটুকু জানি যে, এতে আমাদের মর্যাদার ওপর চরম আঘাত হানা হয়েছে। আমরা বিশ্বব্যাংকের এমন আচরণে সংক্ষুব্ধ। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান প্রশ্নে বিশ্বব্যাংকের এখতিয়ার আছে কি না; থাকলেও কতটুকু সে ব্যাপারে অনেকেই জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশকে যারা দুর্বল দেশ হিসেবে ভাবতে ভালোবাসেন, তাদের উদ্দেশে একটি কথাই উচ্চারিত হতে পারে ‘আমরা একটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছি। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে নির্মিত হয়েছে আমাদের পবিত্র ভূমি। এখানে আঘাত এলে গোটা জাতি তা প্রতিহত করতে যূথবদ্ধভাবে প্রস্তুত’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের ভাষ্যে তার প্রতিফলনও আমরা দেখেছি। বিশ্বব্যাংকের প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার ইস্যু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র পথ হচ্ছে নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া। আমরা তাদের ক্ষণিকের জন্য আশ্রয় দিয়েছি।’

দেশ ও জাতি মনে করে, প্রতিবেশীসুলভ মানবিক গুণাবলির পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এটাকে দুর্বলতা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। বিশ্বব্যাংকের এই অযাচিত উপদেশ কেবল বাংলাদেশের মানুষকেই আহত করেনি। জাতিসংঘকেও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামলানোর ব্যাপারে তাদের ক্ষমতাকেও খাটো করে দেখানো এবং পরোক্ষভাবে দুর্বল অবস্থান আবিষ্কারের চেষ্টাও হয়েছে। বাস্তবতা সেদিকে থাকলেও বিশ্ববাসী এখনো তা ধারণ করতে আগ্রহী নয়। আমরা মনে করি, এই সংঘই এক দিন নান্দনিক পৃথিবী গড়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘বিশ্বব্যাংক একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ১৬টি দেশের জন্য। যেসব দেশে রিফিউজি আছে, সেখানে তাদের হোস্ট কান্ট্রিতে ইন্টিগ্রেট করার বিষয়ে। যেহেতু রোহিঙ্গারা রিফিউজি নয়, তাই আমরা এটা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি। এই রিপোর্টের সঙ্গে আমাদের চিন্তাভাবনার অনেক অমিল রয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাংক যে প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে এটি দীর্ঘমেয়াদি। আমরা এর পক্ষে নই। এটি আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা নাকচ করার পর ওদের সঙ্গে একটা সমঝোতা হচ্ছে। অপছন্দ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে আমাদের শর্তে রাজি থাকলেই এ বিষয়ে চুক্তি হবে। ঘটনা এ পর্যায়ে আসার পর বিশ্বব্যাংক গতকাল মঙ্গলবার ওয়েবসাইটে প্রচারিত এক বিবৃতিতে জানায়, ‘রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তারা বাংলাদেশকে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সুপারিশ করেনি’। বিশ্বব্যাংক বলছে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু প্রশ্নে তারা বাংলাদেশকে ৫৯০ মিলিয়ন ডলারের যে সাহায্য দিয়ে চলেছে তার পুরোটাই অনুদান, ঋণ নয়। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর রোহিঙ্গা ঢলের প্রভাব কমাতেও বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিচ্ছে।

আমরা মনে করি, দুর্বল ভেবে আমাদের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থেকে দূরে থাকাটাই সবার জন্য শ্রেয়। যে জাতি যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, যেকোনো ধরনের অধীনতা তাদের জন্য আত্মহত্যার শামিল। আমরা আমাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। আর এটিই বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close