জাতীয় স্বার্থে লকডাউন কার্যকর করা জরুরি
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের রেকর্ড ছাপিয়ে যাচ্ছে পরদিন। এ অবস্থা সামাল দিতে দেশে ‘লকডাউন’ নামে পরিচিতি পাওয়া চলমান ‘বিধিনিষেধ’ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ায় আগামীকাল ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, বিধিনিষেধ থাকবে সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলেও। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য এবং সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। এ ছাড়া অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষপটে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে গত ৩ মার্চ ‘লকডাউনের’ ঘোষণা দেয় সরকার। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর ছিল। পরে এই ‘লকডাউন’ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এমন অবস্থানকে সমর্থন করলেও লকডাউনের প্রভাবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কত মানুষ বেকার হবে এবং সরকারি চাকরিজীবীর বাইরে সাধারণ মানুষ কীভাবে তাদের সংসারের ব্যয় বহন করবে এমন প্রশ্ন দেশের ব্যবসায়ী মহলসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের। তারা মনে করেন, লকডাউনে লন্ডভন্ড হয়ে পড়বে দেশের অর্থনীতি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টসহ শিল্পকারখানা চালু রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে সরকার। নিঃসন্দেহে এটি একটি শুভ উদ্যোগ। কারণ দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এদের বেশির ভাগই দিন আনে, দিন খায়। প্রায় ১৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতেই বেশি। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কঠোর লকডাউন আরোপ করে সার্বিক অর্থনীতির চাকাকে কীভাবে সচল রাখা হবে, সে বিষয়টি অবশ্যই ভাবতে হবে।
বলা সংগত, করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষতি এখনো উদ্যোক্তারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি; এরই মধ্যে দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়ে গেছে। এবারের ধাক্কার প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে এবং সরকার উদ্যোক্তাদের পাশে সময়মতো না দাঁড়ালে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা প্রবল ঝুঁকিতে পড়বে। ফলে সরকারকে এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করে মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করতে হবে; হাসপাতালে চিকিৎসাসামগ্রী ও আইসিইউ বেড বাড়াতে হবে; বেসরকারি খাতেও হাসপাতালের অনুমোদন আরো বাড়াতে হবে এবং সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে আর এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"