ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

  ১৩ এপ্রিল, ২০২১

মুক্তমত

মহামারি : রমজান ও দোয়া

পাঁচ স্তম্ভবিশিষ্ট জীবন-পদ্ধতির ঐশ্বরিক নিরাপদ আবাসগৃহের নাম ইসলাম। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা ইসলামের অন্যতম ব্যতিক্রমী এক ইবাদত; যা কল্যাণে, সওয়াবে ও বিবিধ উপকারিতায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। আর কদিন পরই পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা শুরু হবে। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাত এই তিন ভাগে বিভক্ত রমজানের পুরো মাসেই আল্লাহপাক তার অনুগত বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্টির চাদর বিছিয়ে দেন। পরম রবের প্রতি আত্মসমর্পিত বান্দার জন্য আরাধ্য ঈপ্সিত বিষয় হলো মাগফিরাত। আর মাগফিরাতের পূর্বশর্ত হলো ইবাদত এবং ইবাদতের নির্যাস হিসেবে দোয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মহিমাময় রমজান হলো সেই প্রকৃষ্ট সময়; যখন পবিত্র কোরআন-হাদিস নির্দেশিত পন্থায় পালনকৃত ইবাদতের মাধ্যমে বান্দারা মাগফিরাত তথা মহান প্রভুর ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার দুর্লভ সুযোগ লাভ করে থাকেন।

এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারি চলছে। বর্তমানে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিছুদিন ধরে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত হয়ে আছে। আমাদের সামগ্রিক বোধশক্তি যেন ক্রমান্বয়ে লোপ পেয়েই চলেছে। এমন এক বৈশ্বিক মহামারিতে আমরা ন্যূনতম নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছি না, স্বাস্থ্যবিধি মানছি না এবং কোনো ধরনের সচেতনতা বা সতর্কতাই যেন আমাদের স্পর্শ করতে পারছে না। এ অবস্থায় আমাদের মাঝে বরকতের মাহে রমজান আসছে। পবিত্র এ মাসের উসিলায় হয়তো আমাদের সম্বিত ফিরে আসবে এ প্রত্যাশাই করি। তাই আমাদের উচিত, রমজানের সিয়াম সাধনায় প্রবৃত্ত হওয়ার আগেই কায়মনোবাক্যে মহান রবের কাছে আত্মসমর্পণ করে যাবতীয় ভুলভ্রান্তি, অন্যায়-অবিচার, পাপাচার-জুলুম আর মানুষের অধিকার, সম্মান ও সম্পদ বিনষ্টের অপরাধসহ সব নেতিবাচকতার চৌহদ্দি ডিঙিয়ে মহান আল্লাহর কাছে লজ্জাবনত মস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

হাদিস শরিফে দোয়াকে ইবাদতের মগজ তথা সারবত্তা বলা হয়েছে। ইস্তেগফার লাভে বান্দার জন্য দোয়া আবশ্যক। দোয়া স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করে। এ দুয়ের মাঝে তফাতের অবসান ঘটিয়ে ঘনিষ্ঠতার পরশ বুলিয়ে দেয়; সর্বোপরি মহান রবের সঙ্গে বান্দার প্রেমময় সম্পর্কের শক্ত ভিত গড়ে দেয় এই দোয়া। জগতের মানুষ যত সম্পদশালীই হোক; কোনো কিছু চাইলে রাগ করে, অসন্তুষ্ট হয়। কিন্তু আল্লাহপাক এমন এক সত্তা, যার কাছে বরং কোনো কিছু না চাইলে তিনি রাগ করেন, অসন্তুষ্ট হন। কেননা তার নামই যে তিনি রেখেছেন ক্ষমাশীল, করুণাময়, দাতা ও দয়ালু। তাই কোনো কিছু চাইলে আল্লাহর কাছেই চাও। কোনো কিছুর সাহায্য প্রয়োজন হলে সরাসরি আল্লাহর কাছেই তার নিবেদন করো। পবিত্র রমজান সেই মোক্ষম সময়, যখন আমরা নিবিষ্টচিত্তে মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে, নিজেদের অস্তিত্ব উজাড় করে দিয়ে, তওবার অঙ্গীকার শানিত করে, যাবতীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে খোদাতায়ালার আস্থাভাজন ও প্রিয়পাত্র হতে পারি। আমরা বলতে পারি, ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।’ অর্থাৎ হে মহান আল্লাহ, তোমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাই, নিঃসন্দেহে তুমিতো ক্ষমাশীল ও দয়ালু। হে আল্লাহ! আমি আমার কৃত পাপাচার স্বীকার করছি, আমাকে মাফ করো। কেননা, নিঃসন্দেহে তুমি ছাড়া আর কেউ ক্ষমাকারী নেই। ‘রাব্বি গফরলি ওয়াতুব্ আলাইয়া ইন্নাকা আন্তাত তাওয়াবুর রাহিম। অর্থাৎ হে রব! ক্ষমা করে দাও, আমার তওবা কবুল করে নাও; নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী, দয়াশীল।

আমরা জানি, মহান আল্লাহর কাছে চাইলেই তিনি খুশি হন। তাই পবিত্র রমজানের আগেই আসুন আমরা বলি, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নার।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের জান্নাত নসিব করো আর জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই। ‘আল্লাহম্মা আজিরনা মিনান্নার ওয়া মুজির।’ অর্থাৎ ওহে প্রভু! আমাদের নরকাগ্নির অভিশাপ থেকে মুক্তি দাও। কেননা, তুমিই তো রক্ষাকারী। ‘আল্লাহুম্মা আদ্খিলনাল্? জান্নাতা মাআল আবরার।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার পুণ্যবান বান্দাদের সঙ্গে আমাদেরও জান্নাতে প্রবেশ করাও। পরিশেষে ‘উদউনি আস্তাজিবলাকুম।’ অর্থাৎ তোমরা আমায় ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব মহান আল্লাহর এই বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে করোনা-গ্রাসে নাস্তানাবুদ আজকের পরিস্থিতিতে আমাদের বিনীত প্রার্থনা ‘আল্লাহম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন সাইয়িইল আসকাম।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! (করোনাসহ) সর্বপ্রকার ব্যাধি থেকে আমরা তোমার কাছে পরিত্রাণ চাই।

লেখক : চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close