অলোক আচার্য

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

দৃষ্টিপাত

প্রাণের খোঁজে মানবজাতির নবযাত্রা

প্রাণ এমন একটি শব্দ, যা পৃথিবী নামক এই গ্রহকে অন্যসব গ্রহ থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সৌরজগতের এই গ্রহটিতেই প্রাণ রয়েছে। তবে থেমে নেই মানুষ। মানুষ ছুটছে প্রাণের খোঁজে। প্রাণ টিকে থাকার আবশ্যকীয় সম্ভাবনাগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। এই মহাবিশে^র রয়েছে অনন্ত রহস্য। এই রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছে গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষ। মানুষের সঙ্গে পৃথিবীর অন্য প্রাণীর পার্থক্য হলো মানুষের কাছে রয়েছে মস্তিষ্ক নামক একটি সম্পদ। এই সম্পদের জেরেই মানুষ অন্যসব প্রাণীকে তার বশে রেখেছে। পৃৃথিবীর সব প্রাণী মানুষের কাছে মাথানত করেছে। পৃথিবীতে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান বহু জীব, অণুজীব রয়েছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় রহস্য হলো মৃত্যু। এই মৃত্যু নিয়েও চলছে বিস্তর গবেষণা। মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে আরো বহু বছর। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত হওয়ার পর থেকেই মানুষ চেষ্টা করছে মহাবিশে^র রহস্য জানার। অনন্ত নক্ষত্রবিথীর দিকে তাকিয়ে সেই রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছে মানুষ। এই মহাবিশে^র অন্য যেকোনো স্থানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে এই বিশ্বাসে মানুষ গবেষণা করে চলেছে। এ নিয়ে বহুবার ইতিবাচক প্রমাণও পেয়েছে। অন্য গ্রহের প্রাণীদের আমরা এলিয়েন বলেই জানি। এসব এলিয়েন কেমন হবে, তাও আমরা জানি হলিউড-বলিউডে নির্মিত সিনেমা বা সিরিয়াল দেখে। ভূরিভূরি সিনেমা নির্মাণ হয়েছে ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে। ভিনগ্রহের প্রাণীরা কেমন হবে? ওরা কি জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানুষের চেয়েও উন্নত হবে? ভিনগ্রহের প্রাণীদের ব্যবহৃত যানকে আমরা বলি ফ্লাইং সসার। পৃথিবীতে ফ্লাইং সসারের আসার খবর বহু যুগ আগে থেকেই মানুষের জানা।

পৃথিবীতে বহুবার ফ্লাইং সসার আসার ঘটনা ঘটেছে। তার সাক্ষী আছে মানুষ। চোখের নিমেষেই উধাও হয়ে যায় এসব যান। বছরের পর বছর কেবল রহস্যই ছড়িয়েছে এসব ভিনগ্রহের যানগুলো। কিন্তু কোনো কূলকিনারা হয়নি। এতসব কথা কি মিথ্যে হবে? মহাবিশে^র কোথাও কি কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে? মানুষের বিশ^াস যে, ভিনগ্রহের প্রাণী আছে। প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই পানির অস্তিত্ব খুঁজছে মানুষ। কারণ পানি হলো প্রাণের প্রধান উপাদান। পানি থাকলেই প্রাণ থাকার সম্ভাবনা থাকে। মানুষ যখন প্রথম এ্যাপোলো-১১তে চড়ে চাঁদের বুকে পা রাখল, সেদিন থেকেই পৃথিবীর বাইরে মানুষের পদচারণার নবযাত্রা শুরু হয়েছিল। আজও চাঁদ নিয়ে মানুষ নিরন্তর গবেষণা চালাচ্ছে। পৃথিবীর এই একমাত্র উপগ্রহের নানা প্রান্ত থেকে বিজ্ঞানীরা চাঁদের পাথর, মাটি সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছেন। কোথাও পানির অস্তিত্ব আছে কি না, তা জানতে চেষ্টা করছেন। চাঁদের পর আরো দুটি সম্ভাবনাময় গ্রহ হলো মঙ্গল ও শুক্র। এই তো মাত্র নাসার মহাকাশযান পারজিভারেন্স রোবট রুদ্ধশ^াস অপেক্ষার পর সফলভাবে মঙ্গলের বুকে অবতরণ করেছে। চাঁদের পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহ নিয়েও মানুষ গবেষণা করছে নিরন্তর। কারণ সেখানেও যে রয়েছে প্রাণের সম্ভাবনা। হয়তো সময়ের কোনো এক খেলায় তা বিলুপ্ত হয়েছে। আবার গবেষণার ফলে তা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। তবে সেসব কেবল সম্ভাবনামাত্র। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় আজ সবই সম্ভব। তাই আশা করা যায়, এ রকম একটি বাসস্থান ঠিক খুঁজে পাবে মানুষ, যা পৃথিবীর বিকল্প হতে পারে। অথবা কোনো প্রাণী যা অন্য কোনো গ্রহে অবস্থান করছে তাদের সঙ্গেও দেখা হবে। মঙ্গলে পৌঁছে সেখান থেকে ছবি পাঠাচ্ছে রোবটটি। গ্রহের বিষুব অঞ্চল, যার নাম জেযেরো, তার কাছে গভীর এক গহ্বরে এই রোবটটিকে নামানো হয়েছে। ধারণা করা হয় যে, জেযেরো কয়েকশ কোটি বছর আগে বিশাল একটি হ্রদ ছিল। সেই হ্রদে ছিল প্রচুর পানি। এবং খুব সম্ভবত সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। লক্ষ্য সেই একটাই। প্রাণের অস্তিত্বের খোঁজ করা। আপাতত পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব নেই।

ক্রমেই প্রসারিত হওয়া এই মহাবিশে^ কত দিন মানুষই সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে পরিচিত সেটা একটি প্রশ্ন। তবে পৃথিবীর বাইরে বসবাসের উপযুক্ত একটি নিরাপদ বাসস্থান খোঁজার এই প্রচেষ্টা কি শুধুই কৌতূহল থেকে না এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্যও রয়েছে? প্রথমত, কৌতূহল তো বটেই। কারণ বিজ্ঞান মানেই তো কৌতূহল। আজ পর্যন্ত যা হয়েছে সবই মানুষের কৌতূহল থেকেই হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্রমেই পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণেই একটি বড় অংশ পানিতে ডুবে যায়; তাহলে মানুষের আশ্রয় কোথায় হবে? আবার মানুষ মানুষকে মারার জন্য মারণাস্ত্র তৈরি করছে। এই মারণাস্ত্র দিয়ে মানুষ নিজেই নিজের ধ্বংসের কারণ হবে। পৃথিবীতে মানবজাতি ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক প্রাণ। পৃথিবী বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠলে সেসব প্রাণীর কী হবে? অন্য যে গ্রহ মানবজাতির পরবর্তী গন্তব্য হবে, সেখানে কী ধরনের প্রাণ থাকবেÑ এ প্রশ্নও রয়েছে জড়িয়ে।

এতসব চিন্তাও রয়েছে মানুষের মাথায়। বিকল্প আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। চাঁদে তো জমি কেনাবেচাও শুরু হয়েছে। এতসব আয়োজন করছে পৃথিবীর বাইরে গিয়ে বাঁচার জন্য। মানবজাতির অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য। মানুষের দরকার একটি নিরাপদ বাসস্থান, যেখানে পৃথিবী পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে। মানুষ কি আদৌ তার এই অভিযানে সফল হবে। পৃথিবী ধ্বংস হওয়া নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। পৃথিবীতে আমরা ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে যেসব প্রাণী থাকার অনুমান করা হচ্ছে, তারা হতে পারে আমাদের চেয়েও উন্নত। বিজ্ঞানে আমাদের চেয়েও অগ্রসর। তারাও কি আমাদের সন্ধান করছে? যদি আমরা কোনো দিন ভিনগ্রহের প্রাণীর মুখোমুখি হই, তখন যদি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধে যায়; তাহলে কি আমরা টিকতে পারব? সিনেমাগুলোতে ফ্লাইং সসার যখন পৃথিবীতে আসে, তখন সব ধরনের প্রযুক্তি অকেজো হয়ে যায় বলে দেখেছি। মঙ্গলের বাইরে মানুষের শুক্র গ্রহ নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। কারণ শুক্র পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ। আকারে ছোট হলেও এর গঠন পৃথিবীর সঙ্গে মিল রয়েছে। সূর্যের থেকে দূরত্ব বিবেচনায় এটি দ্বিতীয় গ্রহ। পৃথিবী তৃতীয়। বিশাল এই মহাকাশ নিয়ে পৃথিবীর বিজ্ঞানী এমনকি সাধারণ মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কী আছে এত বিশাল এই মহাকাশে? কোটি কোটি নক্ষত্রবিথী, নিহারিকা, উল্কা, ধুমকেতু, গ্রহাণুপুঞ্জ আরো কত কত সব নাম, যা মানুষের কৌতূহলের কারণ। এর কোথায় বা কোন অংশে মানুষের মতোই বা মানুষের চেয়ে উন্নত ধরনের প্রাণী বাস করছে। তারা হয়তো প্রতীক্ষা করছে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের। পৃথিবীর মানুষ খুঁজে চলেছে পৃথিবীর মতো বসবাসের উপযুক্ত কোনো পৃথিবীকে। যেখানে অদূর ভবিষ্যতে মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় মানুষ এক দিন ঠিক অসম্ভবকে সম্ভব করবে। পৃথিবী থেকে অন্য কোনো গ্রহে পাওয়া যাবে প্রাণের অস্তিত্ব। তারপর পৃথিবী নামক এই গ্রহটি হবে রূপকথার ইতিহাস।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close