reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি, ২০২১

দারিদ্র্য প্রতিরোধই এখন সময়ের প্রধান দাবি

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের কাছে পরাজিত আজ বিশ্বসভ্যতা। এক বছর ধরে প্রতিরোধের চেষ্টা করেও সফলতার দাবি করতে পারেনি পারমাণবিক শক্তিধর বিশ্ব সম্প্রদায়। এই একটি ভাইরাস কী পরিমাণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এ মুহূর্তে সে তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। আর এই ক্ষতিপূরণ করে কবে বিশ্ব পরিবেশ মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবে তাও বলা যাচ্ছে না। চেষ্টা চলছে। আমরা দেখছি ও জানছি। অপেক্ষায় আছি একটি সুসংবাদের। সুসংবাদ পাওয়ার আগে এই ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, বিশ্বমানব সম্প্রদায় কোন অন্ধকারে প্রবেশ করবে এ নিয়ে আগাম ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষই আজ দারিদ্র্য অথবা দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি বৃত্তের মধ্যে অবস্থান করছে। বাংলাদেশও এর বাইরে থাকতে পারেনি। করোনা মহামারির অদৃশ্য তান্ডবে দারিদ্র্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়, করোনাকালীন দেশে সার্বিক দরিদ্রের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। করোনার প্রভাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বৈষম্যও। সংস্থাটির হিসাব মতে, করোনাকালীন মাথাপিছু গড় শিক্ষাব্যয় কমলেও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য খাতে খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের সব ধরনের ব্যয় করার ক্ষমতা কমেছে। তবে আয়ের বেশির ভাগই তারা খাদ্য কেনার পেছনে ব্যয় করছে। নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে যাওয়া মানুষগুলো আবার তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

জরিপের ফল অনুযায়ী ২০২০ সালের শেষদিকে দেশের দারিদ্র্যে হার পাওয়া গেছে ৪২ শতাংশ। ২০১৮ সালে জিইডি-সানেমের জরিপে যা ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ২০১৬ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা জরিপ অনুসারে দারিদ্র্য হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। বিবিএসের খানা জরিপ অনুসারে ২০১৬ সালে গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের জিইডি-সানেম পরিচালিত জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনাকালীন অর্থাৎ ২০২০ সালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১৬ দশমিক ৩ আর করোনাকালীন ২০২০ সালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা থেকে হয়ত খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়া যাবে না। বস্তুত আমরা এখন কেবল করোনা মোকাবিলার কথা ভাবছি। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও জরুরি। যে প্রবৃদ্ধির পথে আমরা এগোচ্ছিলাম তা ছিল কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি। কোভিডের প্রভাবে এতে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কর্মসংস্থান হারিয়েছি তা পুনরুদ্ধারে এবং নতুন করে আরো কর্মসংস্থান তৈরিতে এখন বিশেষ কর্মযজ্ঞের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ মুহূর্তে সরকারি বিনিয়োগকেই হতে হবে মুখ্য বিনিয়োগ। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগও দারিদ্র্য কমাতে সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া প্রণোদনার বিষয়টি বিশেষ ভূমিকা পালনে সক্ষম। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে দারিদ্র্য ঠেকাতে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। তবে ব্যবস্থাপত্রকে আরো শক্তিশালী করে দারিদ্র্য প্রতিরোধে এগিয়ে আসাটাই জরুরি। সরকার নিশ্চই ভেবে দেখবে, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close