মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

  ২২ জানুয়ারি, ২০২১

ধর্ম

শিশুদের ভালোবাসা নবিজির সুন্নত

শিশুরা মহান আল্লাহর অপার রহমত। এক একজন শিশু এক একটি ফুলের মতো। পিতা-মাতার কাছে প্রত্যেক শিশুই মহামূল্যবান। পরম মমতা, ভালোবাসার মাধ্যমেই শিশুদের বরণ করতে হয়। সারা দেশে সাম্প্রতিক সময়ে শিশু নির্যাতনের চিত্র ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদের ভালোবাসা ও তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে ইসলাম সুন্দরতম দিকনির্দেশনা দিয়েছে, তা মেনে চলা আমাদের জীবনে, পরিবারে, সমাজে একান্ত কর্তব্য।

সভ্যতার সংকট এবং নৈতিক অবক্ষয় থেকে বাঁচার জন্য ইসলাম ঘোষিত শিশুনীতির বাস্তবায়ন ও চর্চা সময়ের দাবি। শিশু অধিকার রক্ষায় ইসলামের রয়েছে বিজ্ঞানধর্মী নীতিমালা। শিশুর সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, তার সঠিক বিকাশের জন্য কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে এসব বিষয় হাতে-কলমে শিখিয়েছেন রাসুল (সা.)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক বেদুইন নবি (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আপনারা শিশুদের চুমু দেন আমরা তো শিশুদের চুমু দেই না। উত্তরে নবি (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা তোমার অন্তর থেকে দয়ামায়া উঠিয়ে নিলে আমি কী করব? (বুখারি)। কোনো এক ঈদের দিন নবি (সা.) নামাজ আদায়ের জন্য বের হলেন। তিনি দেখলেন এক শিশু মলিন বেশে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। নবি (সা.) তার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছ কেন? শিশুটি জবাবে বলল, আমার বাবা-মা বেঁচে নেই, আমি অসহায়, ঈদে আমার কোনো পোশাক নেই, তাই কাঁদছি। নবি (সা.) শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে এলেন, তাকে গোসল করিয়ে নতুন পোশাক দিলেন এবং বললেন আজ থেকে আমি নবি মুহাম্মদ (সা.) তোমার বাবা, আয়েশা (রা.) তোমার মা, ফাতেমা (রা.) তোমার বোন। নবিজির আদর পেয়ে শিশুটি তার দুঃখ ভুলে গেল।

মহানবী (সা.) শুধু শিশুদের ভালোই বাসতেন না, তিনি (সা.) তাদের খোঁজখবরও নিতেন। মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে রসিকতাও করতেন। অনেক সময় ঘোড়া সেজে নাতি হাসান, হোসেন (রা.) কে পিঠে নিয়ে আনন্দ করতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমার ছোট ভাই, তার উপনাম ছিল আবু উমায়ের। তার একটি বুলবুলি পাখি ছিল। সে তার প্রিয় পাখিটি নিয়ে খেলা করত। এক দিন পাখিটি মারা গেল। অতঃপর কোনো এক দিন রাসুল (সা.) আমাদের বাড়িতে এসে দেখলেন, আবু উমায়েরের মন খারাপ। মহানবি (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, আবু উমায়ের মন খারাপ কেন? সবাই বলল, তার বুলবুলি পাখিটা মারা গেছে। তখন মহানবি (সা.) বললেন, ‘হে আবু উমায়ের! তোমার বুলবুলিটির কী হয়েছিল? (সুনানে আবু দাউদ)। একজন নবি এবং রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি শিশুদের খোঁজখবর নিতেন। এটি তার সুমহান চরিত্রের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে শিশুদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার, তাদের স্নেহ করার, মায়া করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : খতিব, মনিপুর বাইতুল আশরাফ

জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close