মোশারফ হোসেন

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২১

মুক্তমত

সবুজ অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ পৃথিবী

প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ বিনষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধকরণসহ নানা বিষয়ের ধারাবাহিকতায় ‘গ্রিন ইকোনমি’ ধারণাটি নতুন মূল্যবোধের জন্ম দেয়। ‘ব্লুপ্রিন্ট ফর এ গ্রিন ইকোনমি’ টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনীতির সফল সম্পর্ক স্থাপনের ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের আপনি গর্বিত অংশীদার হোন’। ‘সবুজ অর্থনীতি’ সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সালে যুক্তরাজ্য সরকারের কয়েকজন অর্থনীতিবিদের ওপর আরোপিত প্রতিবেদন তৈরীকরণের প্রাপ্ত দায়-দায়িত্বের ধারাবাহিক অংশ হিসেবে প্রকাশ পায়।

মানুষ তার উদ্ভাবনী শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ তথাকথিত উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য্যের বিপর্যয়, বায়ুম-লের নানা গ্যাস নিঃসরণে দূষণ ও পরিবেশ বিপর্যয় শুরু হয়েছে মূলত মানবজাতির ক্রমবিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে। উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের সমন্বিত প্রয়াসের ব্যত্যয় আমাদের অদূর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, যেটিকে উন্নয়নজনিত হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞের ফলে মাশুল দিতে হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে আরো দিতে হবে। উন্নয়নের সঠিক মূল্যমানের অনুপস্থিতির ফলে মানবিক সুখ-সুবিধা ও প্রভাব-প্রতিক্রিয়া এক জটিল পদ্ধতির জালে আবদ্ধ। এটি সামগ্রিক, মানবিক নীতিমালার গ-িতে অন্তর্ভুক্ত করতে না পারলে মানবিক ভাগ্যোন্নয়ন বিপর্যস্ত হবে।

দিন যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। বর্ধিত জনসংখ্যা চাহিদার সঙ্গে সংগতির কথা বিবেচনায় নিয়ে আসায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাত্রাও স্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলছে। তাতে পরিবেশের নির্মলতার মান-মাত্রা নিম্নগামী হচ্ছে। স্বাস্থ্যজনিত অপ্রত্যাশিত ব্যয়, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, কার্বন নিঃসরণ, পরিবেশ ব্যবস্থার জন্য অপূরণীয়, যাতে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শৈত্যপ্রবাহসহ নানা ধরনের নিত্যনতুন দূষণ যুক্ত হচ্ছে।

স্বাভাবিক ও সুস্থ-সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অবগাহনের মোটামুটি অবারিত সুযোগ সবুজ অর্থনীতির মধ্যে নিহিত রয়েছে। সবুজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, সবুজ কৃষি, সবুজ জ্বালানি, সবুজ ব্যাংকিং, সবুজ প্রযুক্তি, সবুজ বিনিয়োগ, সবুজ বিপণন, সবুজ শিল্প-কারখানা, কর্মপরিবেশ, পরিবহন, বায়োগ্যাস, ভূ-তাপীয় শক্তি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বজ্রপাত থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ, মানবদেহ থেকে সৃষ্ট শক্তি এসবই সবুজ অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। পরিবেশবান্ধব সৌরশক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে সূর্যের অফুরন্ত আলো ও তাপের সঠিক ব্যবহার বিবিধ কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে অনাগত দিনগুলোয় পরিবেশবান্ধব পৃথিবী নির্মিত হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ অফুরন্ত নয়, এটি নিঃশেষ হবে। কিন্তু সৌরশক্তি প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত, প্রকৃতির অপার দান। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের নীতিতে উৎসাহিত হয়ে নিজস্ব দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে পরিবেশগত সংকটে নিমগ্নতা থেকে উত্তরণের উপায় অনুসন্ধান করা মানেই আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবীর নিশ্চয়তা বিধানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ মূল্য বহন করবে। প্রকৃতি মানুষের নয়, বরং মানুষই প্রকৃতির।

সমুদ্রের ঢেউ, জল ও বায়ু থেকে পরিবেশ প্রতিবেশের কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সবুজ জ্বালানি পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি সৃষ্টি, সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি যেমন হবে, তেমনি পরিবেশবান্ধব অধুনা পৃথিবীতে বাসযোগ্য হবে। মানুষের নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের অবশিষ্ট অপ্রয়োজনীয় অংশটুকু বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী বর্জ্যকে অবিশ্বাস্য শক্তি সম্পদের রূপান্তরকরণই আমাদের আগামী পৃথিবীর সম্পদ হবে। অপরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থাপনায় মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির বিষয়টি চিন্তায় নিয়েই সবুজ কৃষির ধারণার সময় উপযোগী সঠিক সিদ্ধান্তের নামান্তর। এ ক্ষেত্রে বায়োগ্যাসের অধিক ব্যবহারকে উৎসাহিত করা এবং মানবদেহের ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, নানা রোগ-বালাই দূরীকরণের মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব কর্মকা-, উন্নয়ন, পারস্পরিক সহমর্মিতা, সংযোগ বহুমাত্রিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে। বৈশ্বিক উন্নয়নের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করাই সবুজ অর্থনীতির মূল ধারণা। এ ধারণা টিকে থাকবে বিশ্ব সংরক্ষণ কৌশল নীতিতে।

লেখক : প্রভাষক

সমাজবিজ্ঞান, সরকারি ইস্পাহানি কলেজ, কেরানীগঞ্জ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close