reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ অক্টোবর, ২০২০

মুক্তমত

করোনার দ্বিতীয় ধাপে করণীয়

ফারহান ইশরাক

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছানোর পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আবার এই হার ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং নতুন করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের দিকে ধাবিত হয়। সংক্রমণের এ ধরনের প্রবণতাকেই সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ইউরোপ, আমেরিকার অনেক দেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশের দিকেও এগিয়ে আসছে, কারো কারো মতে এই ঢেউ এর মধ্যে শুরুও হয়ে গিয়েছে। সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় তাই এখন থেকেই ব্যাপক আকারে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। কেননা বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকা, এখানে ভাইরাস আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে মার্চের ৮ তারিখ। এর পরবর্তী সময়ে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও একসময় তা শ্লথ হয়ে আসে এবং সংক্রমণের হার নিম্নগামী হয়। এ অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার সংক্রমণের হার ধীরলয়ে বাড়তে শুরু করেছে। এই হার যেন কোনো অবস্থাতেই বৃদ্ধি না পায়, সেদিকেই এখন সবাইকে মনোযোগ দিতে হবে। আশার কথা হলো, দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা কিছুটা হলেও বেড়েছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রারম্ভিককালে মানুষের মধ্যে যে অজানা আতঙ্ক ও ভয় ছিল, গত কয়েক মাসে তা কমে এসেছে। শুরুর দিকে মানুষের ধারণা ছিল, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়া মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। কিন্তু দেশের মানুষের সুস্থতার হার, আশপাশের করোনাজয়ীদের অভিজ্ঞতা জনসাধারণের সেই সংশয়কে দূর করতে সাহায্য করেছে। করোনায় আক্রান্ত অনেকেই ঘরে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়েছেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে মাস্ক পরিধান করে বাইরে যাওয়া, ঘন ঘন হাত ধোয়ার মতো সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিগুলোও মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের করোনা নিয়ে তেমন কোনো সচেতনতা নেই। এ কারণে করোনা প্রতিরোধের জন্য কী ধরনের বিধিবিধান মেনে চলা প্রয়োজন, তা মাঠপর্যায়ের সবার কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। যথাযথ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যদি মানুষ প্রাত্যহিক কাজগুলো করে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলে, তবে সংক্রমণের হার নিম্নপর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে।

দীর্ঘদিনের লকডাউন শেষে অফিস, আদালত, ব্যবসা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শপিং মলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে করোনা-সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। কিন্তু অর্থনীতি ও দেশের উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে হলে অফিস, আদালত, কল, কারখানা খুলে দেওয়ার বিকল্প নেই। তাই এ অবস্থাতেই যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সবাই কাজে যোগ দেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেউ অসুস্থ বোধ করলে বা করোনার লক্ষণ দেখা দিলে, দ্রুত কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ সময়ে কোনো অবস্থাতেই নিজের অসুস্থতা চেপে রাখা বা গোপন করা যাবে না। আবার কোনো সহকর্মী বা পরিচিতজন অসুস্থ কিংবা করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে পরিত্যাগ বা এড়িয়ে চলাও সমীচীন নয়। বরং নিজের সুরক্ষা বজায় রেখে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য চিকিৎসা ও সাহায্যের ব্যবস্থা করা দরকার। অন্যদিকে, এ সময় গণপরিবহনগুলো সবেচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বেশির ভাগ গণপরিহনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না, যার ফলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের গণপরিবহনের সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের জন্য যে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, এই গণপরিহনগুলোতে তা করা হচ্ছে না। উপরন্তু ধারণ সংখ্যার অধিক যাত্রী বহন করে মানুষকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য গণপরিবহনগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যাত্রী ওঠানামা করছে কি না, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে শাস্তির বিধান করতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে দেশের সবগুলো বিশেষায়িত করোনা হাসপাতালকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসাসামগ্রীসহ প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে সংকটের সময় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আর কিছুদিন পরেই দেশে শীতের প্রভাব আরম্ভ হবে। এ সময় মৌসুমি জ্বর ও সাধারণ ফ্লু ভাইরাসে অনেকেই আক্রান্ত হন। শীতের এই সময়টিতে তাই সবারই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। করোনার সেকেন্ড ওয়েভ যাতে মারাত্মক আকার ধারণ না করে সেজন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।

গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। পাশাপাশি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সুস্থতার হারও অনেকাংশেই বেড়েছে। তাই করোনা বিস্তারের এই সময়টিতে সবাই যদি সতর্কতা অবলম্বন করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ জীবনযাপন করেন, তবে খুব সহজেই দেশকে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ থেকে রক্ষা করা যাবে। আর এটি করতে হলে, সচেতন হতে হবে দেশের সব মানুষকে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close