reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মুক্তমত

কাকতালীয় ঘটনা ও কিছু কথা

মো. কায়ছার আলী

বিচিত্র এ পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা রকম ঘটনা। কোনো রকম যোগসূত্র ছাড়াই অনেক সময় এমন দুই বা ততোধিক ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে বিস্ময়কর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলায় এসব ঘটনাকে চিহ্নিত করা হয় কাকতালীয় বা কোইনসিডেন্স্ হিসেবে। এ ঘটনায় সময়ের ব্যবধান, ভিন্ন দুজন মানুষ, পৃথক দুটি ঘটনা ভিন্ন পরিস্থিতিতেও অনেক সময় মিল বা সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো বলে থাকে মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুই হয় না। তাই মানুষ কাকতালীয়কে স্রষ্টার রহস্য বা কুদরত বলে ধরা হয়। তবে কাকতালীয় ঘটনাগুলো মানুষকে কখনো কাঁদায়, কখনোবা হাসায়। গ্যালিলিওর মৃত্যুর বছরে জন্ম হয়েছিল আরেক মহারথী নিউটনের। গ্যালিলিওর মৃত্যুর ঠিক ৩০০ বছর পর জন্ম নেন স্টিফেন হকিং। আর আইনস্টাইনের মৃত্যুর বছরে বিল গেটস এবং স্টিভ জবস। আইনস্টাইনের জন্ম এবং স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যু ১৪ মার্চ। এ যেন ইতিহাসের ব্যাটনরেস। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সত্য ও সুন্দরের পতাকা বহন করে চলা। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাইয়ের সঙ্গে চেহারার মিল ছিল ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জের। তিন বছরের বয়সের ব্যবধান এবং রক্তের সম্পর্ক ছিল তাদের, তবে তারা যমজ নন। আবার ইতালির রাজা উমবের্তো ৪৬ বছর পর তার যমজ ভাইকে ফিরে পান এক রেস্তোরাঁর মালিক হিসেবে। এরপর জানা গেল দুই উমবের্তোর স্ত্রীদের নামও এক মারগারিতা। দুজনেরই সংসারে এক ছেলে, নামে এক ভিত্তোরিও। এরপর দেখা গেল, তারা দুজনেই সামরিক বাহিনীতে একই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তারা যুদ্ধের পদকও পেয়েছেন একই দিনে। যুদ্ধের পর দুজনেই নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে লেগে পড়েন। পৃথিবীর ইতিহাসে যত রহস্যময় এবং কাকতালীয় ঘটনা ঘটেছে, তার শীর্ষে রয়েছে আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এবং ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে বিস্ময়কর মিল। (১) আব্রাহাম লিংকন ১৮৪৬ সালে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেনেডি ১৯৪৬ সালে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য নির্বাচিত হন। (২) ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের উভয়ের একজন করে পুত্রসন্তান মারা যায়। (৩) লিংকনের সেক্রেটারির নাম ছিল কেনেডি এবং কেনেডির সেক্রেটারির নাম ছিল লিংকন। (৪) দুজন প্রেসিডেন্টকেই শুক্রবার গুলি করে হত্যা করা হয়। (৫) উভয় প্রেসিডেন্ট নিজ নিজ স্ত্রীর সামনে নিহত হন। (৬) দুজনকেই ঘাতকরা মাথার পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে। (৭) লিংকনকে গুলি করা হয় একটি থিয়েটার হলে এবং গুলি করে ঘাতক একটি গুদামে পালিয়ে যায় আর কেনেডিকে গুলি করা হয় একই গুদাম থেকে এবং গুলির করার পর ঘাতক ঢুকে পড়ে একটি থিয়েটার হলে। (৮) লিংকনের হত্যাকারী জন বুথ ১৮৩৯ সালে এবং কেনেডির হত্যাকারী লি হারভো ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। (৯) উভয় হত্যাকারীর পুরোনাম জন উলকাস বুথ ঔড়যহ ডরষশবং ইড়ড়ঃয এবং লি হারভো ওসওয়ান্ড খবব ঐবৎাবু ঙংধিষফ ইংরেজিতে লিখতে ১৫টি অক্ষর ব্যবহার হয়। সংক্ষেপে লিখতে ডরষশবং এবং ঙংধিষফ রূল নামে ছিল ৬ অক্ষর। (১০) লিংকনের স্থলাভিষিক্ত প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ১৮০৮ সালে এবং কেনেডির স্থলাভিষিক্ত প্রেসিডেন্ট লিয়ন বি জনসন ১৯০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কাকতালীয় এসব ঘটনা মিলের কারণে অনেকে মনে করেন তারা দুজনেই একই ব্যক্তি ১০০ বছরের ব্যবধানে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আমেরিকানদের সেবার জন্য। পলাশীর যুদ্ধের কুশীলবদের সবাই আজ মৃত। কিন্তু কাকতালীয় বিষয় হলো, পলাশীর যুদ্ধে নবাব তথা জাতির সঙ্গে যারা বেইমানি করেছিল তাদের কারো ভাগ্যেই স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেনি। এরা হলেন মীরজাফর, ইয়ার লতিফ, রায় দুর্লভ, জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ, রাজা রাজবল্লভ, মহারাজা নন্দকুমার, ঘষেটি বেগম, মীরন, মোহাম্মদীবেগ, ওয়াটসন, ক্রাফটন এবং ওয়াসট। এমনকি লর্ড ক্লাইভ নিজের দেশে ফিরে অপকর্মের দায়ে অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। ইতিহাস-সমৃদ্ধ কোহিনুর হিরা নিয়ে বহু বছর ধরে একটা মিথ রয়েছে যে, পুরুষ শাসকদের জন্য তা অভিশাপ। বর্তমানে ব্রিটিশ রাজ সম্পত্তির একটি অংশ অর্থাৎ রানী এলিজাবেথের মুকুটে তা রয়েছে। আবরার ফাহাদ হত্যার পর পরের বছর ২০১৯ সালে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থানসহ নামের আগে-পরে মিলে ২৫ জন আবরার (১৭ জন মেধায়) চান্স পেয়েছেন। মনে পড়ে কি ২০১০ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায় (স্পেন চ্যাম্পিয়ন) অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের শেষের দিকে খেলার আগেই বিশ্ববিখ্যাত তারকা জার্মানির অক্টোপাস পল-এর সবকটি ভবিষ্যদ্বাণী কাকতালীয়ভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ২০১৯ ফাইনালে সবচেয়ে বড় কাকতালীয় ঘটনা ঘটেছে, যা সমগ্র বিশ্ববাসী দেখেছে। ইংল্যান্ড ফাইনালে জিতেছে কিন্তু নিউজিল্যান্ড তো হারেনি। ফাইনালের ম্যাচটি ছিল মহানাটকীয় এবং একটা জাদুর ফাইনাল। যার পরতে পরতে ছিল রোমাঞ্চ আর উক্তেজনা। প্রতি মুহূর্তে ম্যাচের রং পাল্টেছে। ভাগ্যদেবী কখনো এদিকে আবার কখনো ওদিকে। ফাইনালের ইতিহাসে নির্ধারিত ১০০ ওভার (৫০+৫০) শেষে ও দুই দল সমান সমান রান ২৪১। এরপর সুপার ওভার, মোটেও না! কী এক মহাকাব্যিক ফাইনাল। সেখানেও টাই। দুই দলই ১৫ রান করে নেয়। শেষ পর্যন্ত শিরোপা নির্ধারিত হয় গাণিতিক হিসেবে। যাদের বাউন্ডারি বেশি তারাই শিরোপা পেয়েছে। মূল ইনিংসে নিউজিল্যান্ড ১৬টি বাউন্ডারি মেরেছিল আর ইংল্যান্ড মেরেছিল ২৪টি বাউন্ডারি। এক বলে ৬ রান (দৌড়ে ২ রান, কেউ বলে ১ রান ওভার থ্রোতে ৪ রান) নিয়ে বিতর্ক আছে, প্রশ্ন আছে। জয়ের জন্য দু-দলই সমান পরিশ্রম করেছে। কেন এমন হলো? এটাই এক মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। হয়তো এমন হতে পারে বিধাতা নিজেই চেয়েছেন ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফিটি নিয়ে একটু খেলতে। তবে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান একজনই। ইংল্যান্ড স্বাগতিক, বেশি বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছে, ক্রিকেটের জন্ম নেতা এবং রানির জন্মভূমি। তাই ফলাফল যাই ঘটুক, বিশ্বকাপ রানির হাতেই থাকবে। অন্য দুটো দেশ ফাইনালে খেললে হয়তো এমন কাকতালীয় ঘটনা ঘটত কি? হার এবং জিত দুটোই রানির। একেই বলে ঈড়রহপরফবহপব যা সম্পূর্ণ বিধাতার ইচ্ছা।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close