reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মুক্তমত

শিক্ষাব্যবস্থায় উদ্বেগ এবং কিছু কথা

খায়রুজ্জামান খান

দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস হয়ে এলো শিক্ষাঙ্গনে নেই কোলাহল। ভোর হলে শোনা যায় না জাতীয় সংগীত, হয় না পাঠ শপথ বাক্য। ছেলে আমার বড় হবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে। নানা স্বপ্ন বুনতে যখন ব্যস্ততায় কাটছিল দিন হঠাৎ যেন থমকে গেল কোভিড-১৯-এর কারণে। বাস্তবতার চিত্র পাল্টে গেল। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কর্মস্থল যেন থমকে গেল। দেশের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াল। অর্থনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, চাকরিচ্যুত হয়েছেন অনেকে। বর্তমানে ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে শুরু করে অফিস, আদালত, ব্যাংক, মার্কেট, যানবাহন, কল-কারখানা চালু করা হলেও শিক্ষাব্যবস্থা যেন পিছিয়ে পড়েছে অবর্ণনীয়ভাবে।

করোনার কারণে ওলট-পালট হয়ে গেছে শিক্ষাব্যবস্থা। জীবনের তাগিদে অন্য সব খাত স্বাভাবিক হয়ে এলেও পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষায় শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে খোলা হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ বছরের ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে এ পরীক্ষাসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্থগিত পরীক্ষার পরবর্তী সময় ঘোষণা না করায় অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে প্রায় ১২ লাখ পরীক্ষার্থী। দেশে সর্বমোট সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তা দিন পার করছে। কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে এ বিষয় যেন নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করে তুলছে। ইতিমধ্যে, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল, কলেজেও অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হলেও কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে, সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়ে যায়।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে অনলাইনে ক্লাস করতে পারছেন না। ইউজিসি কর্তৃক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ঋণ প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। সেখানে ২৩ লাখ ৫৩ জন পড়ালেখা করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কথা ভাবা কি হয়েছে! তারা অবহেলায় পড়ে যাচ্ছে না? এ প্রশ্ন থেকেই যায়।

এইচএসসি পরীক্ষা কবে নাগাদ শুরু হবে, এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। প্রযুক্তির চেয়ে প্রয়োজন হলো দক্ষ পদ্ধতি। আমাদের জিনে ঢুকিয়ে দেওয়া আছে, ক্লাসে সশরীরে উপস্থিত থেকে পড়া। সেই জিনিসকে রাতারাতি ভার্চুয়াল করে ফেললে একটা বিশাল মানসিক প্রস্তুতি দরকার দুই পক্ষেরই। মানসিকভাবে আমরা প্রস্তুত নই। ক্লাসে উপস্থিত হলেও ক্লাস শেষে দেখা দিচ্ছে মাথা, কান, চোখব্যথা। মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ওয়ার্ল্ডভিশনের ‘চিলড্রেন ভয়েসেস ইন দ্য টাইম অব কোভিড-১৯’ শিরোনামে প্রকাশিত এই জরিপে বলা হয়, মহামারির সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতনের জন্য সরাসরি তিনটি কারণকে উল্লেখ করেছে। সেগুলো হলো শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক চাপ এবং পরিবারে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া। শতকরা ৭১ ভাগ শিশু ও তরুণ বলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তারা নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তিত। তারা বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ অনুভব করছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন ১৩টি উন্নয়নশীল দেশে এই জরিপ চালিয়েছে। দীর্ঘদিন এমন থাকলে শিশু কিশোরদের দ্বিধা, ভয় ও হতাশা আরো বাড়বে। এর থেকে সরে আসতে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত রাখতে হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩০ এপ্রিল ১৯৭২ সালে মে দিবস উপলক্ষে এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘সমৃদ্ধির পথে কোনো সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই’। এই বক্তব্যটির চুলচেরা বিশ্লেষণের সময় এখনই। শিক্ষায় সমৃদ্ধি আনতে হলে পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। শিক্ষা স্তরে যেন মরীচিকা পড়ে যাচ্ছে। অনলাইনে পাঠদান শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশে ব্যাহত হচ্ছে। সেশনজট নামক অভিশাপ যেন দরজায় কড়া নাড়ছে বারবার। সেশনজট শব্দটি অভিধান থেকে মুছে ফেলতে করোনাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে শিক্ষাব্যবস্থার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে সিলেবাস কমিয়ে এনে নতুবা সেমিস্টারভিত্তিক কোর্সের সময়সীমা কমিয়ে এনে সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাবে বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। দেশের সব প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ থেকে শুরু করে সব বিষয় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে হবে। মেধাবী তরুণেরা দেশের বাইরে পাড়ি না জমিয়ে দেশের উন্নয়নে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। দেশের ভেতরেই তাদের শানিত মেধা দিয়ে দেশকে আলোকিত করতে হবে। সর্বোপরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না হলেও সবস্তরের শিক্ষার্থীদের কথা ভাবতে হবে, তাদের হতাশা, মানসিক চাপ দূর করতে হবে। করোনা পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থার সঠিক পথ অবলম্বন করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close