প্রত্যেকের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সঙ্গে আরোপ করেছে বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে মানুষকে ঘরে থাকা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা যেতে বিধিনিষেধ আরোপ এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বের হতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্যমে করোনা পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছেÑ সে বার্তাই আবার নতুন করে দিয়েছে। বর্তমানে দেশে করোনা আক্রান্ত লোকের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। তারপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রচ- অভাব রয়েছে। সুযোগ পেলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে আসছে। রাস্তাঘাটে মেতে উঠছে আড্ডায়। সময়ের বিবেচনায় যা মোটেই কাম্য নয়। এ পরিস্থিতিতে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এসব অসচেতন মানুষ নিজেরাও যেমন বিপদগ্রস্ত হচ্ছে, আবার অন্যকেও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া উচিত।
চলতি মাসের শুরুতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছিল, করোনাভাইরাস বাংলাদেশে সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমিত হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে আইইডিসিআরের পরিচালক এই বলে হুশিয়ার করেছিলেন যে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের যে স্তরবিন্যাস রয়েছে, তার তৃতীয় ধাপে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। এখন সবাই সাবধান না হলে চতুর্থ ধাপ অর্থাৎ মহামারির মুখোমুখি হতে হবে। আরো জানানো হয়েছিল, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটি যদি যথাযথভাবে পালন করা না হয়, তবে চতুর্থ স্তরে চলে যেতে হবে; এমন আশঙ্কার কথাও উচ্চারিত হয়েছিল তখন। এর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সব ধরনের অফিস-আদালত বন্ধ, আকাশ, নৌ ও সড়কপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সবাইকে বলা হয় যার যার ঘরে থাকতে। কিন্তু সরকারের নেওয়া এসব পদক্ষেপ যে খুব একটা কাজে লাগেনি, তা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট। এ অবস্থায় নাগরিকদের দায়িত্বশীল হওয়ার বিকল্প আর কিছুই নেই। সবাইকে কঠোরভাবে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। খেয়ালখুশির চলা বন্ধ করে মানুষকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। দেশের প্রায় অর্ধেকাংশে লকডাউন চলছে। ভাইরাসের বিস্তার রোধে আলাদাভাবে অধিকাংশ জেলা, উপজেলা, অঞ্চল লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সারা দেশে যান চলাচল কার্যত বন্ধ; চলছে সাধারণ ছুটি। এর মধ্যেও সরকার নির্দেশিত সবচেয়ে বড় যে সতর্কতা- ঘরে থাকা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা; সেটি পালনে সন্তোষজনক চিত্র আমরা দেখছি না।
অন্যদিকে শহরের মানুষ যতটা সতর্কতা অবলম্বন করছে, গ্রামে ততটাই ঢিলেঢালা ভাব। এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতর সারা দেশকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে বলে ঘরের বাইরে কোথাও আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারি না। এখান গ্রাম-শহর সব একাকার। আমরা চাই, প্রত্যেকের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। কেবল নিজের কিংবা পরিবারের ঝুঁকি নয়, বরং গোটা দেশের ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই আমরা ঘরে থাকি। ঘরে থেকেই দেশের জন্য কাজ করি। প্রত্যেকের দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই বড় বিপর্যয় থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে পারব-আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"