নাজমুল হোসাইন, ইবি

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নীল জলরাশি আর প্রবালদ্বীপে ইবির একঝাঁক গণমাধ্যমকর্মী

নীল জলরাশি, সুবর্ণ বালুচর এবং নারকেল জিঞ্জিরার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাঝে অসংখ্য প্রবাল রাশি মিলে মিশে একাকার হয়ে তৈরি হয়েছে দেশের এই একমাত্র প্রবালদ্বীপ। নতুন বছরের প্রথম দিনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের একঝাঁক গণমাধ্যমকর্মী এই প্রবালদ্বীপ ভ্রমণে যান। আজকের লেখায় সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক এবং ডিবিসি নিউজের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নাজমুল হুসাইন।

আমাদের দেশে শীত ঋতুটা আসে ছুটির সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। দেশের প্রায় অধিকাংশ স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় এসময়ে থাকে শীতকালীন ছুটি। সব মিলিয়ে ভ্রমণপিয়াসুদের জন্য এটিই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময়। তেমনি এবছর ছুটিতে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বছরের শেষদিনটা কক্সবাজারে কাটানোর পর নতুন বছরের প্রথম দিনেই বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি আর একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন দেখতে আমরা কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজে রওনা হই খুব সকালেই।

হালকা শীতল আবহাওয়া, সমুদ্রের নীল ঢেউ দেখতে দেখতে আমাদের জাহাজ এগিয়ে চলতে থাকে। নাফ নদী পেরিয়ে জাহাজ যখনমফ সমুদ্রে প্রবেশ করবে আপনি হারিয়ে যাবেন নীলের এক অসীম আবেশে। দুপুর আড়াইটার দিকে আমাদের জাহাজ সেন্টমার্টিনের ঘাটে নোঙর করে। পৌঁছেই আমরা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম নীল সমুদ্রের বিশাল বিস্তার দেখে। বিকেলে বালুচরের উপর হেঁটে চলা এবং সমুদ্রের ঠাণ্ডা জলের স্পর্শ আমাদেরকে এক অন্যরকম শান্তি দিয়েছিল। চারপাশে দ্বীপের সবুজ বন এবং অসংখ্য নারকেল গাছ আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল প্রকৃতির অসীম সৌন্দর্যের কথা। নারকেল জিঞ্জিরার আসল সৌন্দর্য্য ফুটে ওঠে বিকেলে। এসময় বালিতে ঢাকা সেন্টমার্টনের বিচ ধরে হেঁটে যেতে পারেন অনেকটা পথ। দ্বীপের স্থানীয়রা খুবই অতিথিপরায়ণ। দ্বীপের পেছনের দিকটা নিরব ও শান্ত। এ দ্বীপের কোনো একটা বেঞ্চিতে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় এক জীবন। জোয়ারের সময় কিছুটা উত্তাল হয় সমুদ্রের ঢেউ, তবে বেশিরভাগ সময়ই থাকে শান্ত। সেই শান্তি ছুঁয়ে যায় মানুষের মন, প্রশান্ত করে আত্মাকে। সন্ধ্যায় সৈকতে বসে একসাথে গান গাওয়া, রাতে সমুদ্রের ঢেউ দেখা, সবকিছুই আমার কাছে অবিস্মরণীয় ছিল।

সেন্টমার্টিনের আরেক মজা সামুদ্রিক মাছে। তরতাজা মাছ রান্না হয় নানাভাবে, করা হয় বারবিকিউ। হোটেলগুলোতে গিয়ে নিজের পছন্দমতো মাছটি বেছে নিতে পারেন। তারপর আপনি যেভাবে খেতে চান তাৎক্ষণিক সেভাবেই তৈরি করে দেওয়া হবে আপনাকে। একটি কথা বলতে হয়, সেন্ট মার্টিন ফাস্ট ফুড বা গ্রীল চিকেন খাওয়ার জায়গা নয়। সমুদ্রের কাছে গিয়ে সমুদ্রের খাবারই খেতে হবে। কাঁকড়া, লবস্টার, চিংড়ীও পাবেন এখানে। আর হ্যাঁ, মাছ বা সামুদ্রিক প্রাণীর বাইরে খেতে পারেন মন ভরে যত ইচ্ছা ডাব! সমুদ্রকে দেখা ছাড়াও সময়কে উপভোগ্য করতে আরো অনেক কিছু করা যায়। এখানে সাইকেল বা মোটরসাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। যা দিয়ে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে আপনি দ্বীপটি ঘুরে দেখতে পারবেন। যেমন ভ্রমণের দ্বিতীয়দিনে সবাই সাইকেল চালিয়ে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণে যায়। ছেঁড়া দ্বীপের কাছাকাছি যেয়ে দেখতে পাবেন মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন এসব ছোট ছোট দ্বীপ। জোয়ার থাকলে নৌকা বা ট্রলার নিয়ে যেতে হবে এসব ছেঁড়াদ্বীপে। তবে ভাটা থাকলে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে হেঁটেই ফিরতে পারবেন আপনি মূল দ্বীপে। যা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তবে এখানে ভ্রমণে এসে বেশকিছু বিষয়ে সচেতন থাকবেন। যেকোনো ধরনের প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এসব ব্যাপারে সচেতন থাকুন। কারণ, আমাদের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। যদি নিজেকে শীতের পাখি গাঙচিল ভেবে প্রকৃতির মধ্যে বিলীন করে দিতে চান, যদি পরিবার পরিজন নিয়ে কিছুটা সময় সতেজ অক্সিজেন কিংবা নীল সমুদ্রের জলরাশির বুকে হারাতে চান, যান্ত্রিকতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে মুক্ত পাখির মতো উড়তে চান, কিংবা কিছুটা সময় নীরবে নিভৃতে নগ্ন পায়ে সমুদ্রের নীল জলে প্রিয় মানুষটির হাতে হাত রেখে চলতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close