মরিয়ম খানম সেতু, চট্টগ্রাম কলেজ

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পিঠা উৎসবে ফ্রেমবন্দি সমাজবিজ্ঞানের ‘একগুচ্ছ গোলাপ’

চট্টগ্রাম কলেজে সোমবার (২০ জানুয়ারি) আয়োজন করা হয়েছিল পিঠা উৎসব ২০২৫। এই দিনটি যেন হয়ে উঠেছিল ঐতিহ্যের এক মধুর সম্মিলন। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠে কলেজ প্রাঙ্গণ। পিঠার ঘ্রাণ, রঙিন সাজসজ্জা আর প্রাণবন্ত আয়োজন এক অভূতপূর্ব আবহ তৈরি করেছিল। কলেজের প্রতিটি কোণায় যেন উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়েছিল। চট্টগ্রাম কলেজের প্রতিটি বিভাগ নিজেদের স্বতন্ত্র রুচি ও সৃজনশীলতায় স্টল সাজিয়ে তোলে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা পরেছিল বাহারি রঙের শাড়ি, আর ছেলেরা এসেছিল পরিপাটি পোশাকে। আগের দিন থেকেই ক্যাম্পাস ছিল সবার ব্যস্ততায় মুখর। স্টলগুলো সাজানো হয়েছিল নানা রঙের কাপড়ে, ফুলের তোড়ায় আর আকর্ষণীয় পোস্টারে। প্রতিটি স্টলে ছিল বাহারি পিঠার সমারোহ- চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, দুধচিতই, নারকেল পুলি, দুধপুলি, মোহনভোগসহ নানা স্বাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা। আরো ছিল ঝাল পিঠার সমাহার। শিক্ষার্থীরাই পিঠা বিক্রেতার মূখ্য ভূমিকায় ছিল। তারা শুধু খাবার বিক্রি করছিল না, বরং নিজের সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করছিল। অনেকের স্টলে পিঠা বিক্রি শেষ হয়ে গিয়েছিল মিনিট কয়েকের মধ্যেই! বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার আনন্দ, ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা, শিক্ষকদের কাছে পিঠা বিক্রি করা, নিজেদের তৈরি পিঠার প্রশংসা শোনা- সব মিলিয়ে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে সবার জন্য।

উৎসবের এক বিশেষ মুহূর্ত ছিল শিক্ষকদের অংশগ্রহণ। কলেজের প্রধান উপাধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ভাইস প্রিন্সিপাল সুব্রত বিকাশ বড়ুয়া এবং অন্যান্য শিক্ষকরা স্টল পরিদর্শন করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের প্রশংসা করেন এবং নিজেরাও পিঠার স্বাদ গ্রহণ করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই হৃদ্যতা যেন এক মধুর সম্পর্কের স্মারক হয়ে রইল।

পিঠা বিক্রি শেষে বন্ধুরা একে অপরকে সময় দেয়। কেউ কেউ স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল, কেউবা মেতে উঠেছিল ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ছবি তোলার আনন্দে। কিন্তু এক মুহূর্তে যেন সবার মনে পড়ে গেল- এটাই শেষ বছর! আমরা এখন চতুর্থ বর্ষে(সমাজবিজ্ঞান বিভাগ), আর কয়েক মাস পরেই বিদায়! বিদায়ের ভাবনাটা যেন এক মিশ্র অনুভূতি ছড়িয়ে দিল সবার মনে। এই ক্যাম্পাসে কেটেছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো- সারাদিনের ক্লাস, প্রিয় শিক্ষকের বকুনি, ক্লাস বাঙ্ক করে আড্ডা দেওয়া, লাইব্রেরিতে বসে গোপনে গল্প করা- এসব স্মৃতির কী কোনো আর্থিক দাম আছে? নেই, তবে এগুলোর মূল্য অর্থের চেয়েও বেশি।

বন্ধুত্ব মানে শুধু হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটা নয়, এটা সেই সম্পর্ক, যেখানে দূরে থেকেও মন জুড়ে থাকে ভালোবাসার ছোঁয়া। বিদায় মানে আলাদা হওয়া নয়।

এই উৎসবের ছবির ফ্রেমে হয়তো একদিন ধুলো জমবে, কিন্তু আমাদের হৃদয়ে স্মৃতি চিরসবুজ হয়ে থাকবে। আজ থেকে পাঁচ বছর পর হয়তো আমরা সবাই ভিন্ন পথে হাঁটব, সবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়তোবা থাকবেনা। তবে দোয়া করি আল্লাহ যেন সবার স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপদানে সহায়তা করেন। বন্ধুত্বের শত ভুল বোঝাবুঝি, আর বাকবিতন্ডার তিক্ত স্মৃতি নিমিষে হারিয়ে যাবে, যখন এই ফ্রেমবন্দি ‘একগুচ্ছ গোলাপ’ এর দিকে তাকাব। ফ্রেমবন্দি গোলাপগুলোর মধ্যে রয়েছে বিথী, ওর্মী, শুকরানা, ঈশা, কাঁকন, রাহি, চৈতী, আকলিমা সহ অনেকে।

চট্টগ্রাম কলেজের এমন আয়োজন চলমান থাকুক। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম কলেজে অসংখ্য উৎসব হোক, যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বাইরেও নিজেদের ঐতিহ্যকে ধারণ করতে পারবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close