
তরুণ লেখকদের বইমেলা ও বই ভাবনা
শুরু হলো অমর একুশে বইমেলা। এ মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির প্রাণের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। প্রতিবছর বইমেলা এলেই পাঠক, লেখকের সমাগমে মুখরিত হয় বইমেলা প্রাঙ্গণ। বইমেলা যেন পাঠককে নতুন করে পাঠক হিসেবে আর লেখককে নতুন করে লেখক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। এআই, চ্যাটজিপিটির এই যুগেও সৃজনশীল ভাবনা নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন লেখক, নতুন পাঠক। প্রযুক্তি বিস্তৃতির এই যুগে লেখকদের বইমেলা ও বই ভাবনা তুলে ধরেছেন কয়েকজন তরুণ লেখক। লেখাটি গ্রন্থনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাইফুল জামান ঝুমু।

বইয়ের ছোঁয়ায় রঙিন হোক তরুণ প্রজন্ম
অমর একুশে বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। সারা বছরেই দেশের নানা স্থানে বই মেলার আয়োজন করা হলেও অমর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাড়তি আমেজ বিরাজ করে। মেলা উপলক্ষ্যে নানা উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে চলতে থাকে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের প্রস্তুতি। বইমেলা লেখক-পাঠককে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়। লেখকের অটোগ্রাফসহ বই পাঠকদের জন্য পরম পাওয়া। লেখকরাও পাঠকদের ভালো-মন্দ অনুভূতির কথা জানতে পারেন। বর্তমানে প্রযুক্তির আধিপত্য চললেও ছাপা বইয়ের আবেদন শেষ হয়ে যায়নি। বইয়ের ডিজিটাল রুপান্তর চললেও এখনো ছাপা বইয়ের বিস্তৃতি অনেক। যদিও তরুণ প্রজন্ম সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল অর্থাৎ প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিলেও বইমেলায় আগত অধিকাংশ পাঠকই বয়সে তরুণ। অনেকে বলেন, এখনকার ছেলে-মেয়েরা বই পড়ে না কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বইয়ের প্রতি তরুণ প্রজন্মের প্রবল আগ্রহ রয়েছে। তাদের বইয়ের প্রতি আরো আগ্রহী করে তুলতে হলে প্রয়োজন মান-সম্পন্ন বই। মেলায় হাজার হাজার বই আসলেও কতগুলো বই সাহিত্য বিচারে উত্তীর্ণ হবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এআই, চ্যাটজিপিটি কিংবা ডিপসিকের যুগে পাঠকদের বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সাহিত্য গুণসম্পন্ন বইয়ের বিকল্প নেই। পত্রিকার পাতায় বিচিত্র লেখা প্রকাশের পর এবারের বইমেলায় প্রথমবারের মতো প্রকাশ হচ্ছে আমার উপন্যাস ‘অনন্ত সংগ্রাম’। বইটি জ্ঞানকোষ প্রকাশনীর ২৪ নম্বর প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট রুম অপসংস্কৃতি, ছাত্র সংগঠনের নির্মম শারীরিক, মানসিক নির্যাতন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের ছাত্র আন্দোলনে নৃশংসতা, শহরে মেস জীবনে নানা অনাচার, অপরিণত বয়সে প্রবাসী স্বামীর মানসিক নিগ্রহে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীর অপ্রকাশিত প্রেমের মানসিক দ্বন্দ্বের জটিল সমীকরণে টানটান ঘটনা প্রবাহে এগিয়েছে গল্প। তারুণ্য নির্ভর বইয়ের সাহিত্য বিচার করবেন প্রবীণ সাহিত্যিকরা। তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে তা অবশ্য পাঠ্য হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
এম এম উজ্জ্বল
সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বইয়ের বন্ধনে পরিবর্তন হোক সমাজ, হোক আত্মোন্নতি
দীর্ঘদিন ধরেই লেখালেখির চর্চা রয়েছে। পাঠক হিসেবে যতটুকু আগ্রহ, দ্বিগুণ আগ্রহ ছিল লেখক হওয়ার। এবার দুঃসাহস করে আত্মপ্রকাশ করেই ফেললাম। যদিও দিনদিন পাঠকের স্খ্যংা তুলনামূলক কমে আসছে। অধিকাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিলস দেখেই সময় কাটায়। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছেন; শুধু তাদের উদ্দেশ্যে লেখা আমার বই যারা কাব্যের ভাষায় কথা জানতে চায়। যারা চায় স্রষ্টা ও সৃষ্টির নিগূঢ় সম্পর্ক অনুধাবন করতে, যারা বিরাট ব্যক্তিত্ব মির্জা গালিবকে বুঝতে চায় তাদের জন্য আমার ক্ষুদ্র প্র?য়াস। স্বল্প লেখনীর মাধ্যমে বৃহৎ জ্ঞান উপহার দিতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মানুষ কতটুকুই বা নিজেকে সময় দেয়? এই বইমেলা যেন শিখাতে পারে একান্তে নিজেকে সময় দেওয়া জীবনের মূল্যবান মুহূর্ত। এই মুহূর্ত কে ধারণ করার জন্য বইমেলা সেই প্রভাব রাখবে আশা করি। আমাদের মতো লেখালেখির জগতে নবীন যারা আছি; অংশীদার হয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়তে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি। স্বপ্ন কেবল সমাজের পরিবর্তন নয়, পরিবর্তন আত্মোন্নতির। পাঠকদের কাছে অনুরোধ থাকবে- আপনার পরিচিত, আপনজনদেরও বই পড়ে শুনাবেন। এককালের শ্রোতা একদিন পাঠক হয়ে উঠবে। এককালের পাঠক একদিন লেখক হয়ে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি- লেখকেরা হলেন শব্দের যোদ্ধা। এক শব্দের সঙ্গে অপর শব্দের ভাব, মিলনে নতুন বার্তা দেয়। একটি কলম দিয়েই ঝড় উঠানো যায়। বিপ্লব ঘটানো যায় শব্দের স্ফুলিঙ্গে! আমাদের মতো যোদ্ধাদের এই সামান্য প্রচেষ্টা যেন অব্যাহত থাকে আপনাদের সহযোগিতা কাম্য করি।
ইরাতফা বিনতে রেদোয়ান
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বই হোক মানুষের কল্যাণে নিবেদিত
বইমেলা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই হয়ে থাকে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ভাষার মাহাত্ম্যকে বুকে ধারণ করে, পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে প্রতিবছর ‘অমর একুশে বইমেলা’র আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। বইমেলা এমন একটি মেলা যেখানে পুরাতনকে নতুন করে জানা এবং নতুনকে সামনে নিয়ে চলাÍএই দু’য়ের মেলবন্ধন গড়ে তুলে। ঈদের মতো আনন্দ নিয়ে নবীন-তরুণ লেখকদের কাছে বইমেলা হাজির হয়। লেখক-পাঠকের বই বিনিময় এবং পরস্পরের সাক্ষাৎ লাভ ঘটে, যা লেখক ও পাঠক সমাবেশে বেশ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিককালে, তরুণদের বই প্রকাশের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এই বিষয়টিকে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখলেও আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি ঠিক এইভাবে- স্রোতের বিপরীতে সব মাছ যেমন টিকে থাকে না, টিকে থাকতে পারে না- সব লেখকও পাঠকের মাঝে টিকে থাকতে পারবে না। পাঠকের হৃদয়ের তৃষ্ণা ও ক্ষিদের স্রোত মিটাতে না পারলে- হারিয়ে যাবে, বিলীন হয়ে যাবে একেবারে। লেখার মান ও শুদ্ধ চিন্তার লেখকরা কেবল টিকে থাকবে আজন্ম, পাঠকদের হৃদয়ে। তবে প্রতিবছর শুধু ঢাকা শহরে বইমেলার আয়োজন না করে- অন্তত প্রতিটি বিভাগে বাংলা একাডেমি কর্তৃক বিভাগীয় বই মেলার আয়োজন করা দরকার। তাছাড়া, লেখক ও প্রকাশক নতুন বই প্রকাশের আগে ভাবা উচিত- বইটির ভেতরে যে বিষয়বস্তু আছে তা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত কি-না? এই ভাবনা লালন করে এই প্রথম লিখে ফেললাম কাব্যগ্রন্থ ‘ইনসাফের পতাকা’। প্রকাশিত হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এর ৫৯৩ নম্বর স্টলের ছিন্নপত্র প্রকাশনী থেকে। বই হলো জ্ঞান আদান প্রদানের মাধ্যম। কেবল মানুষের কল্যাণেই জ্ঞান আদান প্রদান হোক- লেখক প্রকাশকের কাছে এই প্রত্যাশা।
ইমরান লস্কর
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
"