
চট্টগ্রাম কলেজের ১৫৬ বছর পদার্পণে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
যেখানে পাহাড়-সমুদ্রের গলাগলি বসবাস, যেখানে আকাশ হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায়, তা চট্টগ্রাম। আর চট্টগ্রামের বুকে ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের প্রাণের বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজ। প্রতিষ্ঠার ১৫৫ বছর পেরিয়ে ২ জানুয়ারি ১৫৬ তম বছরে পদার্পন করলো। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হিসেবে কলেজ প্রাঙ্গণ সেজেছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। নতুন বছর, নতুন সাজসজ্জার মাঝে শিক্ষার্থীদের নানা প্রত্যাশা রয়েছে কলেজকে ঘিরে। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থীদের নানারকম প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন এ শিক্ষার্থী ছাবিহা জামান

‘বিশ্ব নাগরিক’ গড়ে তোলার কান্ডারী হয়ে উঠুক চট্টগ্রাম কলেজ
বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ ‘চট্টগ্রাম কলেজ’। দীর্ঘ পথচলায় অসংখ্য স্বনাম ধন্য মানব গড়ে তুলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর। প্রযুক্তির অগ্রগতিতে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন সময়, বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠার। আমার প্রত্যাশা, শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার সর্বাত্নক সহোযোগিতা যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের থাকে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। পাঠ্য বইয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে সৃজনশীল মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন এবং সৃজনশীল জ্ঞান চর্চায় রাজনৈতিক অপশক্তি ক্যাম্পাসে যেন বিরোধীতার পরিবেশ সৃষ্টি না করে সেদিকে সচেতন থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য। ফ্রিল্যান্সিং সহ ক্যারিয়ার গঠনে নানাবিধ সেমিনার আয়োজন করলে ফলপ্রসূ হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নিয়মিত কাউন্সিলিং ব্যবস্থা রাখতে পারলে তা শিক্ষার্থীদের হতাশামুক্ত জীবন গঠনে সহায়ক হবে। এছাড়া যে শিক্ষার্থীরা অনলাইন আয় সহ নিজেকে একটা অবস্থানে নিয়েছেন তারা যদি উদ্যোগ নেন যে, কলেজের অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে কম মূল্যে প্রশিক্ষণ দিবেন, এধরনের কল্যাণময়ী উদ্যোগে কলেজকর্তৃক সহোযোগিতা এবং অনুপ্রেরণা পাওয়া যাবে, এমন প্রত্যাশা রাখছি। সবাই একসঙ্গে এগিয়ে গেলে, এগিয়ে যাবো আমরা, এগিয়ে যাবে দেশ। সুনাম ছড়িয়ে যাবে আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠ, চট্টগ্রাম কলেজের।
মরিয়ম খানম সেতু
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।
আধুনিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই
চট্টগ্রাম কলেজ বাংলাদেশের একটা শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী কলেজ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা চট্টগ্রামের অন্যতম সেরা বিদ্যাপিঠ চট্টগ্রাম কলেজ। গত ২ জানুয়ারিতে এই ঐতিহ্যবাহী কলেজটি পদার্পণ করেছে ১৫৬ বছরে। বর্তমানে প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত কলেজ ক্যাম্পাসটি। ১৫৬ বছরে এসেও এই শিক্ষার্থীদের চাওয়া একটি আধুনিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও ঐতিহ্যবাহী কলেজ চট্টগ্রাম কলেজ হয়ে একশত ছাপ্পান্ন বছরে পদার্পণ করেও কলেজটির নেই নিজস্ব বাস সার্ভিস। নেই ক্যান্টিন, নেই পর্যাপ্ত ছাত্র বা ছাত্রী নিবাস। যার ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও থাকার ভোগান্তি পোহাতে হয়।
স্বৈরাচার শাসনের পতনের মাধ্যমে দীর্ঘ কয়েক বছর পর শিক্ষার্থীরা প্রাণ খুলে নিঃস্বাস নিয়েছে ক্যাম্পাসে। কিন্তু তারপরও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের হেনস্তার শিকার হতে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, সেই নিঃস্বাস যেন চাপা না পরে। স্বাধীন ও নিরাপদ ভাবে ক্যাম্পাসে চলতে পারে। প্রিয় ক্যাম্পাসের ধুলা গায় মাখতে পারে।
নাদিয়া সুলতানা
বাংলা বিভাগ।
ঐতিহ্যের ১৫৬ বছরে আমার প্রত্যাশা
বাণিজ্যিক রাজধানী, বৃহত্তর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ। এই কলেজের আয়তন ৬ একর। এটি বাংলাদেশের প্রাচীন কলেজগুলোর মধ্যে একটি। এই কলেজের অনেক সুনাম এবং ঐতিহ্য রয়েছে। এই কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। সেই প্রিয় কলেজ আজ ১৫৬ বছরে পদার্পণ করেছে। এ সময়ে আমার প্রত্যাশা, আবাসিক ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসগুলোর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, মেডিকেল সেন্টারে, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের মাধ্যমে সুবিধাদি বৃদ্ধি করা। ক্রীড়া সরঞ্জাম বৃদ্ধি ও দক্ষ ক্রীড়া শিক্ষকের মাধ্যমে, কলেজের ক্রীড়াঙ্গণকে এগিয়ে নেওয়া। স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা। প্রাণ প্রিয় কলেজের অপরাজনীতি নিষিদ্ধ, আদর্শিক রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
মোহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম
বাংলা বিভাগ।
আলোকিত ভবিষ্যতের প্রত্যয়ে এগিয়ে যাক প্রাণের বিদ্যাপীঠ
১৫৫ পেরিয়ে ১৫৬ বছরে পদার্পণ করেছে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম কলেজ। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত নতুন প্রজন্মের স্বাধীনতার পর এবার ভিন্ন আলোকে উদযাপিত হয়েছে চট্টগ্রাম কলেজ দিবস। মুক্ত চিন্তার বিকাশ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধের কেন্দ্র প্রাণের চট্টগ্রাম কলেজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানবিক, মৌলিক ও প্রায়োগিক শিক্ষার অবিরোধে এ অঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তার করে চলছে প্রাণের বিদ্যাপীঠ। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিবিড় চর্চায় চট্টগ্রাম কলেজের অনবদ্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ক্রীড়া ও শিক্ষা সংস্কৃতির নানা বিভাগে চট্টগ্রাম কলেজ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। দেশের স্বনামধন্য এই বিদ্যাপীঠ তার স্বকীয়তা নিয়ে মাথা উঁচু করে অবস্থান করুক বিশ্ব মানচিত্রে। সবসময় আশা রাখি সব ধরনের অপসংস্কৃতি, অন্যায়, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি নিরসনে প্রাণের বিদ্যাপীঠ এগিয়ে যাক। জ্ঞান ও আলোর পথের অভিযাত্রায় চট্টগ্রাম কলেজ একটি নতুন দিগন্ত তৈরি করবে এই প্রত্যাশা রাখি।
সুমাইয়া গণি শেফা
বাংলা বিভাগ।
"