সুমন গাজী, বাকৃবি

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

জ্ঞান অন্বেষীদের ভিড় যমুনা-যুগান্তরে

ঘড়িতে তখন বাজে ভোর ৫টা ৩০ মিনিট। প্রকৃতি যেন ঘুমন্তপুরীর মতো নিস্তব্ধ। চারপাশের স্নিগ্ধ নীরবতাকে ভেঙে কিছু কর্মমুখর ব্যক্তিত্ব জেগে উঠেছেন। তারা ব্যস্তভাবে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছেন। কারণ তাদের যেতে হবে জ্ঞান অন্বেষণে, অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নতুন কিছু যোগ করার প্রত্যয়ে। গন্তব্য সুদূর ঢাকা, যমুনা টেলিভিশন এবং যুগান্তর পত্রিকা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (বাকৃবিসাস) বার্ষিক প্রশিক্ষণ কর্মশালার অংশ হিসেবে আয়োজিত এ পরিদর্শন। স্মৃতির পাতায় বিশেষ দিনটি ছিল ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪। ভোরের আকাশে তখনো সূর্যের আলো ফোটেনি, চারপাশ কুয়াশার চাদরে মোড়ানো। প্রকৃতির সেই স্নিগ্ধতা আর মৃদু শীত উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়লাম পত্রিকা অফিস পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে।

সমিতির সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখলাম পরিচিত মুখগুলোর ব্যস্ততা। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে একসঙ্গে যাত্রা শুরু করার। কিছুক্ষণ পর গাড়ি চলে এল। আমরা একে একে উঠে পড়লাম গাড়িতে। সাংবাদিক সমিতির অগ্রজ ও বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকার পথে রওনা হলাম।

মিডিয়া ও পত্রিকা অফিস পরিদর্শনের পরিকল্পনাকে ঘিরে সবার মাঝেই ছিল এক অন্যরকম উত্তেজনা, আর কৌতূহল। অগ্রজ সদস্যরা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আর মজার স্মৃতিগুলো শেয়ার করে আমাদের আবেগ আর উচ্ছ্বাসকে আরো চাঙা করে তুলছিল। প্রতিটি মুহূর্তে যেন আনন্দের ডালপালা আরো বিস্তৃত হচ্ছিল। সবাই একসঙ্গে গান গাওয়ার মুহূর্ত অনেক অনেক উপভোগ্য ছিল।

যাত্রাপথের সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশও ছিল দারুণ উপভোগ্য। প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে এক নির্ধারিত স্থানে সকালের নাশতার জন্য বিরতি নেওয়া হলো। নাশতার সময়টি ছিল প্রাণবন্ত আড্ডা আর হাস্যরসে ভরপুর। সেই মুহূর্তগুলো যেন ভ্রমণের আনন্দকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছিল।

প্রায় চার ঘণ্টার ভ্রমণের পর সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (বাকৃবিসাস) সদস্যরা পৌঁছালেন যমুনা টেলিভিশন কার্যালয়ে। সেখানে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন যমুনা টেলিভিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পুরো টিমকে স্বাগত জানিয়ে চ্যানেলের কার্যক্রম ও নীতিমালার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন চ্যানেলের সিনিয়র সাংবাদিকরা।

মিডিয়া হাউস পরিদর্শনের অংশটি ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আমাদের পুরো মিডিয়া হাউস ঘুরিয়ে দেখান। এডিটোরিয়াল প্যানেল, ভয়েস রেকর্ডিং রুম, গ্রাফিক্স প্যানেল, আর্কাইভ রুম, স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড, বিজনেস বুলেটিন, এবং টকশো স্টুডিও প্রতিটি বিভাগের কার্যক্রম আমরা কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। নিউজ রুমের কাজের পরিবেশ পরিদর্শন, এবং লাইভ সম্প্রচারের পেছনের জটিলতাগুলো দেখে আমরা অবাক হয়েছি। যমুনা টিভির নিউজরুম যেন ছিল এক কর্মব্যস্ত মৌচাকের মতো। তাদের কাজের পদ্ধতি, একাগ্রতা, এবং টেকনিক ছিল অত্যন্ত প্রশংসণীয় ও শিক্ষণীয়।

পরিদর্শনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সময়টি কাটে স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড স্টুডিওতে। রাত ৮টার যমুনার বিশেষ সম্প্রচারে নিয়মিত ভক্ত হওয়ায় এই অভিজ্ঞতা আমার জন্য ছিল অসাধারণ। সেখানে আনন্দমুখর পরিবেশে একটি ফটোসেশনও সেরে নেওয়া হলো।

যমুনা টেলিভিশনের কনফারেন্স রুমে আমাদের সঙ্গে সময় কাটান চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক ফাহিম আহমেদ। সেখানে আমরা যমুনা টেলিভিশন পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণা করি। এই সময় আমাদের প্রথমবারের মতো যমুনা টেলিভিশনের লোগোখচিত একটি মগ উপহার দেওয়া হয়। বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকেও যমুনা টেলিভিশনকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়।

দুপুরের খাবার শেষে, বেলা তিনটার দিকে আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য, যুগান্তর পত্রিকা অফিস পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সেখানে পৌঁছে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন সিনিয়র সাংবাদিক শিপন হাবিব, যিনি আমাদের পুরো পত্রিকা অফিস ঘুরিয়ে দেখালেন।

দেশ, আন্তর্জাতিক, বিনোদন, ক্রীড়া, ভিডিও জোন, গ্রাফিক্স, ই-পেপার প্রস্তুত, প্রতিটা ডেস্ক ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল দারুণ শিক্ষণীয়। আমাদের মতো মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকদের পাঠানো সংবাদ কীভাবে সম্পাদনা করা হয়, কীভাবে পাবলিশ করা হয় সেগুলোও দেখলাম। প্রতিটা বিভাগের কাজের ধারাবাহিকতা, প্রযুক্তির ছোঁয়া, এবং সাংবাদিকদের একাগ্রতায় আমাদের মুগ্ধ করে।

পরিদর্শনের এক পর্যায়ে সাক্ষাৎ হলো দেশের পথিতযশা সাংবাদিক ও যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম সঙ্গে। তার সঙ্গে কথপোকথনে আমরা শিখলাম কঠোর পরিশ্রম ও সততার মূল্য। তার কথাগুলো শুধু আমাদের অনুপ্রাণিত করেনি, বরং আমাদের সাংবাদিকতার পথচলায় দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।

সর্বোপরি, এটি ছিল অভিজ্ঞতায় ভরপুর একটি দিন, যেখানে প্রাপ্তির মাত্রা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একটি দিনের জন্য বাকৃবির কিছু উদ্যমী শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে ভিড় জমিয়েছিল যমুনা ও যুগান্তরে। হয়তো আগামী বছর আবারও নতুন কোনো পত্রিকা অফিসে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাব। শিখব অনেক কিছু, জানব নতুন বিষয়, আর সেই সঙ্গে তৈরি হবে আরো আনন্দময় মুহূর্ত এটাই সবার প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close