reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

উপকূলীয় অঞ্চলে হাসি ফোটাচ্ছে ওরা...

ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমগুলো আমাদের ধীরে ধীরে পরিবার, স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটউিব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের কারণে মানুষ চলে যাচ্ছে এক অজানা জগতে। মুঠোফোন ও কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের করে তুলছে অলস, সহিংস ও হতাশাগ্রস্ত। ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম হারাচ্ছে ধৈর্যশীলতা, সহনশীলতা এবং বোধবুদ্ধি। ‘মানুষ মানুষের জন্য.. জীবন জীবনের জন্য... একটু সহানুভূতি কি? মানুষ পেতে পারে না বন্ধু’ ভূপেন হাজারিকার এ জীবনমুখী গানের পঙক্তিগুলো আর তাদের মনে দোলা দেয় না।

তবে এ যান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থায় এখনো কিছু মানুষ রয়েছে, যারা মানুষের দুঃসময়ে, বিপদে-আপদে, মহামারিতে এগিয়ে আসে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এফএম রেডিওতে এমন মহতি মানুষের গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিল কিছু তরুণ। অতঃপর তারা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ২০১৯ সালের পহেলা জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করে ‘আমরা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও মানবসেবামূলক সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির নানা কার্যক্রম আলোকিত করে তুলেছে পুরো অঞ্চলকে। মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি ও ভালোবাসার সবটুকুই জয় করছেনে এসব সংগঠনের কর্মীরা। আজ সেই তরুণদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গল্প তুলে ধরেছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল হুসাইন।

২০১৭ সালের ঘটনা। সেসময় নিয়মিত বাংলাদেশের কয়েকজন জনপ্রিয় আরজে’র মধ্যে আরজে কিবরিয়া ছিল খুবই জনপ্রিয়। তার এবিসি রেডিও তে প্রতি সপ্তাহে ‘হ্যালো ৮৯২০ জীবনের গল্প’ এই শিরোনামের অনুষ্ঠানটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। সেবছর ঈদ উপলক্ষে বিশেষ পর্বে মিরাক্কেল খ্যাত অভিনেতা কমর উদ্দিন আরমান উপস্থিত থাকে এই জীবনের গল্প অনুষ্ঠানে। সেই গল্পটি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেন লিটু। গল্পে উঠে আসে আরমান শুধুমাত্র একজন কমেডিয়ান নয়, অসহায় মানুষের জন্য অসাধারণ কিছু কাজ করে এই গুণী কমেডিয়ান শিল্পী। আরমান খুব অল্প বয়স থেকেই সামাজিক নানারকম স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করতো। সে মূলত কক্সবাজার এলাকায় পা বাঁকা এবং ঠোঁট কাটা রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা করে। সেই পর্বে আরমান বলছিলেন দুইভাবে মানুষকে হাসানো যায়, একটি কমেডিয়ান জোকস বলার মাধ্যমে এবং অন্যটি হলো মানুষের উপকার করার পর তার চোখে-মুখে খুশির হাসি দেখা যায়। দুইটা হাসির মধ্যে মূল্যবান হাসি হলো, পরের হাসি ফোটানোটা। মূলত ওই গল্পে মানুষের উপকার করার পর হাসি ফোটানোর চেষ্টা ছিল ‘আমরা’ গঠনের মূল প্রেরণা।

২০১৭ সালের প্রচারিত সেই গল্পটা লিটুর শোনার পর তার খুব কাছের বন্ধু আল আমীনকেও শোনায় গল্পটা। আল আমীনকে শোনানোর পেছনের কারণ হলো, আল আমীনেরও ছোটবেলা থেকে দুই পা বাঁকা। গল্পটা শোনার পর জানা যায়, ওই রোগের চিকিৎসা করাতে হলে আরো অল্প বয়সে যোগাযোগ করা উচিত ছিল। প্রথমে তাদের দুজনের মন খারাপ হলো। কারণ, পা টা আর কখনোই ঠিক হবে না। তবে মন খারাপ বেশিদিন থাকলো না।

এদিকে আল আমীনের স্থানীয় বাজারে একটি মোবাইল সার্ভিসিং’র দোকান ছিল। সেই দোকানে অবসর সময়ে আড্ডা দিতো লিটু, আল আমীন, অলিউল্লাহ, মামুন এবং আবির। ইতোমধ্যে সবার আরমানের গল্পটা শোনা হয়ে গেছে। একদিন হুট করেই লিটু সবাইকে প্রস্তাব জানালো, আরমানের মতো একটি সংগঠন গড়ে তোলার। সবাই প্রথম প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। অতঃপর কলেজ পড়াকালীন সময়ে ২০১৯ সালের পহেলা জানুয়ারি কিছু ফরম আর খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে তাদের হাইস্কুল মাঠে বসে। বছরের প্রথম দিন একটি ভালো কাজ করার মনমানসিকতা লালন করে সেদিনই ‘আমরা’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে তারা। সংগঠনটি যার গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তোলা তার নামের প্রথম অক্ষর থেকেই ‘আমরা’ নামটা বাছাই করা। অর্থাৎ, আরমানের নাম থেকে ‘আমরা’।

প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বছরে তেমন কিছুই করতে পারেনি সংগঠনটি। তবে প্রথম বর্ষপূর্তিতে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাম্পাফুল আশ্চর্য প্রফুল্ল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠে ফ্রী ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্প পরিচালনা করে তারা। মূলত সেই থেকে সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, সামাজিক অবক্ষয় রোধে পোস্টারে প্রচার প্রচারণা, করোনাকালীন সময়ে সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, জাতীয় দিবসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, জাতীয় দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ, বিনামূল্যে রক্তদান, নারীদের স্বাস্থ্যসেবামূলক সেমিনার, বার্ষিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, দ্বিমাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিন পত্রিকা প্রকাশ, অসহায়-দরিদ্যদের ইফতার বিতরণ, ঈদ সামগ্রী বিতরণ এবং দেশীয় সাংস্কৃতিক চর্চাসহ নানামুখী সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এলাকায় একটি ফাউন্ডেশন গড়তে চান। যেখানে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকবে, যার মাধ্যমে অসহায় হতদরিদ্র মানুষ এবং শিশু ও বৃদ্ধদের উন্নত চিকিৎসা সেবা ফ্রি দেওয়া হবে। এছাড়াও প্রতিটি গ্রামে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠারও স্বপ্ন দেখে তারা, যেখান থেকে তাদেন ধারণা উন্মুক্ত জ্ঞান বিতরণ হবে। সর্বোপরি একটি উন্নত মননশীল দেশপ্রেমিক, মানবদরদী মানুষ গড়তে চান তারা। যারা সবসময়ই আত্মমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখবে।

একটি এফএম রেডিও গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুণের হাতে গড়ে ওঠা স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও মানবসেবামূলক সংগঠন হলো ‘আমরা’। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল আ. প্র. চ. মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের স্কুল মাঠ থেকে গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত ‘সুখে-দুঃখে সবার পাশে, আমরা আছি একসাথে’ স্লোগান ধারণ করে সমাজের বিভিন্ন মানবসেবা মূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে সুনাম কুড়িয়েছে সংগঠনটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close