সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, বাকুবি
ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে বাকৃবিসাসের পুনর্মিলনী

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। কৃষি বিষয়ক সর্বাঙ্গীন গবেষণা ও উন্নয়নে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে বাকৃবি। দেশব্যাপী ‘প্রকৃতিকন্যা’ রূপে খ্যাত বাকৃবির শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নিরলস অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমেই জাতীয় পরিসরে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার বিকাশ ঘটেছে। কৃষি কাঠামো বিকাশের এই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ গবেষণামুখী, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে দেশ ও বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঠিক দুবছর পরেই ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বাকৃবিসাস)।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের যাবতীয় সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি ৬২ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় বহু শিক্ষার্থীর সাংবাদিকতার দক্ষতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বাকৃবিসাস সদস্যদের নিবেদিতপ্রাণ লেখনীর মাধ্যমে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপ্রণালী ও গবেষণা কার্যক্রম নয়, দেশের কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক সামগ্রিক উন্নয়নও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছে এবং প্রশংসিত হয়েছে।
৬২ বছরের এই যাত্রাপথে, ২০২৫ সালের শুরুতেই নবজাগরিত বাংলায় তথা বাকৃবি প্রাঙ্গনে বাকৃবিসাস আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য পুনর্মিলনীর। প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যদের মিলনমেলায় পুনর্মিলনীর এই আয়োজন হয়ে ওঠে অনন্য।
পুনর্মিলনী উপলক্ষে বাকৃবির শিক্ষক ছাত্র মিলনায়তন (টিএসসি) চত্বরে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয় পুনর্মিলনী আয়োজনের প্রাণোচ্ছল উদযাপন। টিএসসির ৪ নম্বর কক্ষ, সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ের সামনে অঙ্কন করা হয় বর্ণিল আল্পনা। পুর্নমিলনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাকৃবির ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের ৪ নম্বর কক্ষের (বাকৃবিসাস কার্যালয়) সামনে আনন্দ উদযাপনের রোল পরে গিয়েছিল। কার্যালয়ের সামনে বর্ণিল আল্পনা অঙ্কন, আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় পুরো টিএসসি চত্বরকে। এ আনন্দ উদযাপনকে পূর্ণাঙ্গ করে তুলতে এবং বাকৃবিসাসের সদস্যদের উজ্জীবিত করে রাখতে বিভিন্ন সঙ্গীত বাজিয়ে পরিবেশকে আনন্দমুখর করে রাখা হয়। উৎসবে সবার এক হয়ে হই-হুল্লোর ছিল পুনর্মিলনী উদযাপনেরই একটি মজাদার অংশ।
পুনর্মিলনীর মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পরদিন সকাল ৯টায়, সদস্যদের রেজিস্ট্রেশন পর্ব সম্পন্নের মাধ্যমে। সকাল ১১টায় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে শুরু হয় এক বিশেষ সেমিনার। প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যদের পরিচিতি পর্বের মাধ্যমে শুরু হওয়া সেমিনারে পরিচিতি পর্ব শেষে প্রদর্শিত হয় সংগঠনের সোনালি অতীতের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত। প্রাক্তন সদস্যরা তাদের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা বাকৃবিসাসের বর্তমান সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেন।
স্মৃতিচারণ ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবার পর্বে বাকৃবিসাসের সাবেক সভাপতি নাজিব মুবিন বলেন, ‘বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি ছিল আমার পরিবার। সুখে-দুঃখে এ পরিবার পাশে ছিল। আজও আমার কর্মজীবনে সমিতির অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হচ্ছে।’
বাকৃবিসাসের অন্যতম সাবেক সভাপতি ও পুরোধা ব্যক্তিত্ব শাহীদুজ্জামান সাগর বলেন, ‘পুরোনো প্রজন্মের সদস্যদের সঙ্গে দেখা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ছিল অন্যরকম। তাদের হাতের লেখা সংবাদপাঠের গল্প আমাদের নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।’
স্মৃতিচারণ পর্ব শেষে প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যরা একত্রিত হয়ে একটি গ্রুপ ছবি ধারণ করে। এরই মধ্য দিয়ে সেমিনার পর্বের সমাপ্তি ঘটে। সেমিনারের পর মধ্যাহ্নভোজ শেষে শুরু হয় খেলাধুলার আয়োজন। বল নিক্ষেপ, হাড়ি ভাঙা এবং ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবাই দিনটিকে খুনসুটিমুখর এবং আনন্দঘন করে তোলে। খেলাধুলা পর্ব শেষে সবাই বেরিয়ে পরে ব্রহ্মপুত্র নদের উদ্দেশ্যে। সেখানে ইতোমধ্যেই নৌবিহার পর্বের আয়োজন করা হয়েছিল। নৌকায় চড়ে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌভ্রমণ সব সদস্যদের মাঝের দিনভরের ক্লান্তি দূর করে তাদের আবার প্রাণোচ্ছল করে তোলে।
সন্ধ্যায় আয়োজিত বারবিকিউ পার্টি এবং ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সৃষ্টি হয় এক প্রাণবন্ত পরিবেশ। রাতের পুরস্কার বিতরণ পর্বে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। রাতের ভোজ শেষে কার্যকরী সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে পুনর্মিলনীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তবে এ সমাপ্তি এক নতুন সূচনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে।
বাকৃবিসাসের সাধারণ সম্পাদক তানিউল করিম জীম বলেন, ‘পুনর্মিলনী শুধু স্মৃতিচারণ নয়, এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে এক সেতুবন্ধন। সাংবাদিকতার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশায় এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে এ আয়োজন।’ বাকৃবিসাসের এই পুনর্মিলনী শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠানের নয়, বরং একটি ঐতিহ্য ও পরিবারের মিলনের প্রতীক। এটি অতীতের অভিজ্ঞতা ও বর্তমানের উদ্যমকে একত্রিত করে নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে।
"