কাজী মালিহা আকতার, চট্টগ্রাম কলেজ
কাপ্তাইয়ের সৌন্দর্যের সাক্ষী উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক সাক্ষীদাতা স্থান কাপ্তাই। কাপ্তাইয়ের গন্তব্য পথে কৃষিক্ষেতের সমাহার থাকায় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সফরের উপযুক্ত একটি স্থান। কেননা শিক্ষার্থীরা নিজেদের পাঠ্যবইয়ে পড়াকে বাস্তবে উপলব্ধি করতে পারে।
গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথমবর্ষের (২২-২৩ সেশন) শিক্ষার্থীদের ঢল নামে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। সবাইকে একইসূত্রে বেঁধে দিতে প্রত্যেককে দেওয়া হয় একটি করে কলেজের লোগোসহ ক্যাপ। ক্যাপের মধ্যে লেখা অনার্স প্রথমবর্ষ ডিপার্টমেন্ট অব বোটানি যেন বলছে এরা সবাই একজন। এ সফরে শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশক হিসেবে সঙ্গে ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম, সহকারী অধ্যাপক ফয়েজ উল্লাহর ও প্রভাষক মো. আতিকুর রহমান।
সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম কলেজের মেইন গেট থেকে দু’টি বাস শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ মোট ৬২ জনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে। যাত্রাপথে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস যেন প্রবল হয় গ্রুপ ফটোতে
আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে। এরপর সকালের নাশতা দেওয়া হয় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল বাস নং-২ পিছিয়ে পড়েছে তাই বাস নং-১ নোয়াপাড়া এলাকায় ২০ মিনিটের জন্য বিরতি নেয়। বিরতি চলাকালীন আবুল কাশেম স্যারের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ক্যামেরায় বন্দি হয়। ৯টায় আবার যাত্রা শুরু করে বাসটি। মাঝে সবাইকে চকলেট
বিতরণ করা হয়।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বাস রোয়াজারহাট ইছামতী নদী সংলগ্ন এলাকায় থামে। এলাকার বিভিন্ন জমি থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে। প্রথমে পুকুরের পানি থেকে ওয়াটার ব্লুম সংগ্রহ করে। এরপর ডাল গাছের আক্রান্ত পাতা ও গাছের মূলের নডিউল সংগ্রহ করে। তারপর শিক্ষার্থীদের গাছের মধ্যে থাকা লাইকেন পর্যবেক্ষণ করান শিক্ষকরা। এছাড়াও রোগাক্রান্ত বেগুন পাতা, ফুলকপির রোগযুক্ত পাতা, কাঁঠালের মুচি সংগ্রহ করা হয় পরীক্ষা করারা জন্য। আরো পর্যবেক্ষণ করা হয় মরিচ ও বেগুন গাছের বিভিন্ন রোগ। ইছামতী নদীর পানিতে থেকে শেওলা সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা বাসের দিকে রওনা করে। তারপর ১১টায় বাস আবার যাত্রা শুরু করে।
১১টা ১৫ মিনিটে সবাইকে আপেল দেওয়া হয় হালকা নাশতা হিসেবে। ১১টা ৫০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা কর্ণফুলী পেপার মিল পরিদর্শন করে। সেখানে গিয়ে পেপার তৈরির পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও উৎস সম্পর্কে জানতে পারে শিক্ষার্থীরা। আরো জানতে পারে পেপার মিলের পটভূমি। কর্ণফুলী পেপার মিল পরিদর্শনে সাহায্য করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা উপ প্রধান রসায়নবিদ রুপম বড়ুয়া। শিক্ষার্থীরা পেপার মিল ত্যাগ করে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে।
১টা ১৫ মিনিটে বাস বনফুল বিশ্রামাগারে থামে। সেখানে
নামাজের বিরতি দেওয়া হয় ও দুপুরের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা
করা হয়। দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয় দুপুর ২টায়। ৩টায়
কাপ্তাই লেক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আবার যাত্রা করে বাস। ২টি
বোট নিয়ে ৩টা ১৫ মিনিটে লেক ভ্রমণ শুরু হয়। বোট ভ্রমণ
ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কেউ ছাদে কেউ বোটের ভিতরে বসে উপভোগ করে কাপ্তাইয়ের সৌন্দর্য। অসংখ্য ফটোসেশন চলে পুরো ভ্রমণজুড়ে। শিক্ষার্থীদের অনেকে গলা ছেড়ে গান করে সঙ্গে যোগ দেয় মো. আতিকুর রহমান স্যার। প্রায় দেড় ঘণ্টা ভ্রমণের পর ৫টায় বোট তীরে ফিরে আসে।
অবশেষে বাস ৫টা ২০ মিনিটে কলেজের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবাই প্রায় ক্লান্ত তাই সবাইকে চাঙা করতে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে
দেওয়া হয়। আর সবাই নিজেদের ক্লান্তির কথা ভুলে নাচ শুরু করে। পথিমধ্যে বিকেলের নাশতা পরিবেশেন করা হয়। ৮টা ১০ মিনিটে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে বাস থামে। সবশেষে সবাই বাসার উদ্দেশ্যে বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে সুন্দর সফরের সমাপ্তি ঘটে।
"